নিজস্ব প্রতিবেদকঃপান’বরজে কাজ করতে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ মুনসুর রহমান (৬৩)। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পায়ে কামড়ে ধরে শেয়াল। নিজেকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে প্রানে বেঁচে যান তিনি । ততক্ষণে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে পা’সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ।
মুনসুর রহমানের মতো আরও ২৫ জন একে একে শেয়ালের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ৭ ঘটিকার সময় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর স্কুল পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রামে শেয়ালের আক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে সচেতন করতে মাইকিং করা হয়েছে। নিজেদের রক্ষা করতে একটি শেয়ালকে পিটিয়ে হত্যা করে গ্রামবাসী।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যান কিন্তু শেয়ালের কামড়ানোর কোন ভ্যাকসিন না থাকায় আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়।
আহতরা হলেন, শ্রীপুর স্কুল পাড়া গ্রামের মুনসুর রহমান (৬০), আবদুল গাফফার (৬১), শহিদুল ইসলাম (৩০), নজরুল ইসলাম (৫৪), আমিনুল ইসলাম (৪০), মকবুল হোসেন (৬০), নাজিম উদ্দিন (৪৪), রুহুল আমিন (৩২), আবদুর রশিদ (৪৯), আফসার আলী (৬১), ইদ্রিস আলী (৩৫), হাফিজুর রহমান (৪৯), আবদুস সালাম (৬০) ও রফিকুল ইসলাম (৪৫), আফজাল, মান্নান।
গুরুতর জখম হয়েছেন, আলহাজ্ব লোকমান,আলহাজ্ব আয়নাল,আফসারুজ্জামান,আবুল কাসেম,হাবিবুর রহমান।
উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, আজ সকাল ৭ টার দিকে নিজের পানবরজে কাজ করতে যান মনসুর। পানবরজে ঢুকতেই শেয়াল এসে তাঁকে ঘিরে ধরে কামড়ানো শুরু করে। এ সময় তিনি চিৎকার শুরু করেন। পরে গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে এসে তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর গ্রামের অন্য শ্রমিকেরা আলাদা-আলাদা পানবরজে গেলে তাঁরাও শেয়ালের আক্রমণের শিকার হন। এভাবে সকাল ৯টা পর্যন্ত ওই গ্রামের ২৫ জন শেয়ালের আক্রমণের শিকার হন।
এদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আরও এক কৃষককে আক্রমণ করতে গেলে লোকজন দলবেঁধে একটি শেয়ালকে পিটিয়ে হত্যা করেন। তাঁরা জানান, শিয়ালটি কামড়াতে এসেছিল এ সময় লোকজন দলবেঁধে ধাওয়া করলে শেয়ালটি না পালিয়ে কামড়াতে আসলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। শেয়ালকে পালানোর সুযোগ দেওয়া হলেও না পালিয়ে আক্রমণ করে। এ জন্য বাধ্য হয়ে হত্যা করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইনতাজ আলী বলেন, শ্রীপুরের প্রধান অর্থকরী ফসল পান। নদী ও বিলের ধারে পানবরজগুলো স্থাপন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শেয়াল ছিল না। তবে ৮ থেকে ১০ বছর ধরে শেয়ালের সংখ্যা বাড়লেও মানুষের প্রতি আক্রমণ এটাই প্রথম। লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। শেয়ালের ভয়ে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
আহত আমিনুল ইসলাম বলেন, পানবরজে শেয়াল থাকে। তাঁরা কোনো দিন সেগুলোকে মারেননি। শেয়ালও কোনো দিন আক্রমণ করেনি। দিনের বেলায় তাঁরা পানবরজে নির্বিঘ্নে কাজ করেন। তবে রাতের বেলায় শিয়ালগুলো আহারের জন্য বের হয়। কেন আজকে এভাবে কামড়ানো শুরু করল, তা বুঝতে পারছেন না।
শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধা বলেন, শেয়ালকে না মারার জন্য ও লোকজনকে সর্তক হয়ে চলার জন্য বলা হয়েছে। সর্তক করে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। তবে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সাফিয়া সুলতানা মুঠোফোনে বলেন, শেয়ালের আক্রমণের শিকার লোকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়া ভ্যাকসিন না থাকায় আক্রমণের শিকার রোগীদের ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সবাই সুস্থ আছেন।
উপজেলার উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এরকম খবর তাঁরা কোথাও শুনেনি। বন্য প্রাণীকে মেরে ফেলা ঠিক নয়। তবে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে কেন এমন ঘটনা ঘটেছে।সবাইকে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেন তিনি।