মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ ছোট ছেলেকে মামলার হাত থেকে বাঁচাতে প্রয়োজন টাকার। নিজস্ব বভিটেমাটি ছাড়া জমানো কোন টাকা নেই ,হযরত আলী ও হাজেরা দম্পতির। কোন পথ খুঁজে না পেয়ে ঘর সহ ভিটেমাটি বিক্রি করে দেন। নিজেদের কষ্ট হলেও ভাল থাকবে সন্তান এইভেবে আর ৭/৫ ভাবেননি ৷ ঘর সহ ভিটেমাটি বিক্রির টাকা ছেলেকে পাঠিয়ে দেন তারা। জমি দলিল করে দেওয়ার পর সেখানে থাকতে পারেননি ৷ অবশিষ্ট যেটুকু টাকা ছিল তা দিয়ে দুজনের ঔষধ খেতে চলে যায়৷ পরে থাকার কোন জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশে জরাজীর্ণ ঘরে কোনমত বসবাস শুরু করেন তারা৷
হজরত-হাজেরা দম্পতির বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের চৌদ্দহাত কালিতলা গ্রামে৷ সাংসারিক জীবনে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা-মা তারা৷কোনমত এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ৷ অভাবের তাড়নার দুজন ছেলে ও ছোট মেয়ে চলে যায় ঢাকায়৷ ঢাকা থেকে বড় ছেলে চলে যায় ভারতে। পরে আর তার সাথে কোন যোগাযোগ হয়না তাদের। ছোট ছেলে ও মেয়ে কাজ করেন গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে। ছোট ছেলে, মেয়ে সংক্রান্ত ঝামেলায় পরে হারাতে হয় তাদের বসতভিটা৷আর ছোট মেয়ে আমেনা ঢাকায় কাজ করেন গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে৷
বয়সের ভাড় নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিন চলতো হাজেরা-হজরত দম্পতির জীবন৷ নানাবিধ রোগ আর বয়সে বিছানা থেকে রাস্তা আর রাস্তা থেকে বিছানা যাওয়ার বাইরে আলাদা কোন কাজ করতে পারতেননা হজরত৷ খেয়ে, কখনো বা না খেয়ে দিন কাটিয়ে নিতেন তারা৷ কয়েকমাস আগে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পরেন হজরত আলী। বাবার অসুস্থতার খবরে ঢাকা থেকে চলে আসেন ছোট মেয়ে আমেনা (২০)৷ নিজের কিছু জমানো টাকা দিয়ে চিকিৎসা করালেও মে মাসের শেষ সপ্তাহে পৃথিবী ছেরে চলে যায় হজরত আলী৷ বর্তমানে বৃদ্ধা মা ও মেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে রাস্তার ধারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কষ্টময় এজীবনে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছেন ষাটোর্ধ হাজেরা ও তার মেয়ে আমেনা। তবে দুচোখ ভরে স্বপ্ন দেখছেন একদিন নিজ ঘরে থাকতে পারবেন তারা৷ তাদের এরকম মানবেতর জীবনযাপনে দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও৷ স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে হজরত চাচা মারা গেছেন৷ উনারা অনেক কষ্ট করে চলেন। চাচা শেষ সময়ে এসে লাঠি ছাড়া চলতে পারতেননা৷ আমি দেখেছি উনারা মুড়ি খেয়ে দিন কাটাতো। আমরা এলাকাবাসী কখনো কখনো সামান্য সহযোগিতা করেছি৷ এখন উনার বিয়ে দেওয়ার মত উপযুক্ত এক মেয়ে আর মা একসাথে থাকে। যেখানে থাকে সাথে একটা সচল রাস্তা। সবসময় যানবাহন চলাচল করে। যেকোন সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে৷ তাদেরকে যদি একটা ঘর দেওয়া হয় সরকারি ভাবে তাহলে তারা ভালভাবে থাকতে পারবেন৷ হাজেরার ছোট মেয়ে আমেনা বলেন, আমার বাবা- মায়ের অনেক বয়স৷ উনারা যখন দুজনে অসুস্থ হয়ে পরে তখন আমি এখানে চলে আসি। বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এখন আমি আর আমার মা এখানে কষ্ট করে থাকছি৷ মা বয়সের কারনে কাজ করতে পারেননা৷ আমি চাতালে কাজ করি যা হয় তা দিয়ে আমরা মা-মেয়ে জীবন চালায়৷ তবে সারাদিন কাজ করে রাতের বেলা রাস্তার পাশে রাত কাটানো খুব কষ্টের৷ আমাদের পিছন পাশে সরকারি ঘর হচ্ছে যদি দেওয়া হয় আমাদের একটা ঘর তাহলে আমরা ভালভাবে থাকতে পারব৷ হাজেরা বেগম বলেন, আমার মাইয়াটা বিয়ার উপযুক্ত কিন্তু দিতে পারছিনা৷ আমি বিয়ের কথা বললেও বলে আমাক ছেরে যাবেনা। অনেক কষ্ট করে আমরা মা-মেয়ে এখানে থাকি। রাতে ঘুম হয়না৷ ঘর থেকে বের হলেই গাড়ির ভয়। আমাদের একটা থাকার জায়গা দিলে উপকার হবে আমাদের। স্থানীয় ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলাম বলেন, আসলে উনারা খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করছেন। আমরা হাজেরা চাচীর সরকারি ঘরের জন্য কথা বলেছি। আশা করা যায় উনারা পাবেন৷ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আসলে অনেক কষ্টের। মা-মেয়ের মানবেতর জীবনযাপন। তারা যদি প্রকৃতঅর্থে ভূমিহীন হয়ে থাকেন তাহলে তাদের সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দেওয়া হবে। সেই সাথে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।
সর্ম্পকিত খবর সমূহ.
November 21, 2024