কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় গত দুই সপ্তাহ ধরে চাষিদের শ্যালো মেশিন ও সেচযন্ত্রের সাহায্যে পানি দিয়ে অঞ্চলের প্রধান ফসল আমন চাষাবাদ করতে দেখা গেছে। শুধু আমন চাষে নয় পানির সংকটে পাট চাষিরাও অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে শ্যালো ও সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পাট জাগ দিচ্ছেন। বৃষ্টির দেখা না পেয়ে পানির সংকটে চলতি মৌসুমে আমনের চাষাবাদ ও পাট জাগ দিতে না পাড়ায় জেলাজুড়ে প্রান্তিক চাষিরা ছিলেন চরম দুশ্চিন্তায়।
শ্যালো মেশিন ও সেচযন্ত্র দিয়ে পানির ব্যবস্থার মাধ্যমে গত ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে চাষিরা আমনের চাষাবাদ শুরু করেছেন। আর যেসব চাষির পানি দেওয়ার সুযোগ ছিল না তারা বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলেন। গত কয়েকদিন টুপটুপ করে দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়লেও শনিবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমন চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে এখনো অধিকাংশ পাটচাষি পানির সংকটে ভুগছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা কেউ কেউ জমির আইল ঠিক করছেন। যাতে জমির পানি বেড়িয়ে না যায়। সেই সাথে ট্রাক্টর দিয়ে আমনের জমি তৈরি করছেন। সব মিলিয়ে বৃষ্টির দেখা পাওয়া এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকদের জন্য আর্শীবাদ। তাই চাষিরা এখন আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলার কুরুষাফেরুষা গ্রামের কৃষক শুশীল কুমার রায় ও হোসেন আলী জানান, বৃষ্টির জন্য তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করেছি। তবুও বৃষ্টির দেখা নাই। তাই বাধ্য হয়ে কিছু জমিতে সেচযন্ত্র দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছি।
তারা আরও জানান, শনিবার রাতে হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সত্যিই মনটা ভরে গেল। বাকি জমিগুলোতে বৃষ্টির পানিতে চাষাবাদ সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন আর বাড়তি খরচ লাগল না।
নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী এলাকার আব্দুল মান্নান ও বিমল চন্দ্র সিংহ জানান, আমন আবাদটা প্রান্তিক কৃষকের প্রধান ফসল ও লাভজনক। খরচও কম। বৃষ্টি না থাকায় আমরা খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এখন আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আল্লাহর রহমতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় জমিতে অনেক পানি জমেছে। মনের আনন্দে আমন চাষ করতে পারছি।
কুড়িগ্রাম জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.মজুরুল হক জানান, চলতি আমন মৌসুমে এ জেলায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেচ, শ্যালো মেশিন ও বৃষ্টির পানিতে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষিরা আমন ধান রোপন করেছেন। প্রতিদিনই চাষিরা আমন ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেহেতু বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, আশা করি আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই আমন চাষাবাদ শেষ হবে।