গ্রামের মাতব্বরদের হিংস্র আচরণের জন্য গ্রামে থাকা দুষ্কর হওয়াতে রিনির বাবা সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামে আর থাকবে না। সারাদিন ধরে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বস্তা বন্দী করে গুছিয়ে রাখে। রাত হতেই সকলকে নিয়ে অজানার পথে যাওয়ার সাহস করে রেলস্টেশনে পৌঁছে যায়। কিছুক্ষণ পরে ট্রেন আসতেই সকলে মালামাল সহ ট্রেনে ওঠে। ট্রেন ছেড়ে দেবে এমন সময় সাত বছরের রিনিও ট্রেনে ওঠে, রিনি ট্রেনে উঠে দেখে ঐ বগিতে কেউ নেই সম্পূর্ণ বগি খালি এবং অন্ধকার, রিনি বুঝতে পারে ও ভুল করে পাশের বগিতে প্রবেশ করেছে। তাই রিনি ভয় পেয়ে আবার ছুটে যায় দরজার কাছে, গিয়ে দেখে ট্রেন দ্রুত গতিতে ছুটছে, নেমে পাশের বগিতে যাওয়ার কোন উপায় নাই। কিন্তু একা একটি অন্ধকার বগিতে থাকবে কি করে সেটা ভেবে খুব ভয় পেয়ে কান্না করে। অনেক সময় কান্না করার পরে বুঝতে পারে বৃথাই সে কান্না করছে এ কান্না তো কেউ শুনতে পারবে না। তাই সে স্রষ্টাকে স্মরণ করে করে একটু সাহস সঞ্চয় করে জানালার পাশে বসে তাকিয়ে থাকে বাহিরে, কোথাও কোন আলো দেখা যায় কিনা সে ভাবনা নিয়ে। একা মনে ফেলে আসা স্মৃতি নিয়ে অনেক কিছু ভাবে আর লক্ষ্য রাখে কোন ইস্টিশনে ট্রেন থামে কিনা, তাহলেে দৌঁড়ে নেমে পাশের বগিতে উঠে যাবে পরিবারের অন্য সকলের কাছে। রিনি হারে হারে টের পাচ্ছে পরিবার কতো গুরুত্বপূর্ণ, পরিবার ছেড়ে কেউ বেশিক্ষণ দূরে থাকতে পারে না। পরিস্থিতির কারণে কখনো কাউকে দূরে থাকতে হলেও মনের সাথে যুদ্ধ করে থাকলে হয়, আজ রিনির মনের সাথে অসহনীয় যুদ্ধ হচ্ছে। ট্রেন চলছে তো চলছে কোথাও থামছে না, রাতের নিকষ কালো আঁধার দেখে দেখে রিনি ভয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে। এক সময় রিনি ঘুমিয়ে পড়ে, মাঝে মাঝে বগির ভিতরে বিকট শব্দ শুনে রিনির ঘুম ভেঙে যায় কোথাও কিছু দেখতে না পেয়ে ভয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ভাবে এখানে মরে গেলেও কেউ উদ্ধার করতে আসতে পারবে না চিৎকার করেও কোন লাভ হবে না। তাই কপালে যা আছে তাই হবে চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকাই ভালো, যাকিছু হয় হোক এ নিয়ে আর ভাবা যাবে না। মনে মনে অনেক কথা বিরবির করতে করতে রিনি ঘুমিয়ে যায়। রিনির ঘুম ভাঙে মা’য়ের অশ্রুসিক্ত ভারাক্রান্ত ভাড়ী কণ্ঠস্বরের ডাক যখন কর্ণে প্রবেশ করে। চোখ মেলে তাড়াহুড়ো করেই মা’য়ের গলা জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে কতো অভিমানী কথা বলে রিনি। রিনির মা বলে সারারাত স্রষ্টাকে ডেকেছি আর কেঁদেছি আর ভেবেছি তুমি মনে হয় ফেলে আসা প্লাটফর্মে থেকে গেছো, আর কি ওখানে গিয়ে তোমাকে খুঁজে পাবো, এসব চিন্তা করেছি। তোমার বাবা বুদ্ধি করে এই বগিতে যদি না খুঁজতো তাহলেও তো তোমাকে খুঁজে পেতাম না। রিনির বাবা বললো ট্রেন থেকে সবাই নেমে এসো এটাই ট্রেনের শেষ গন্তব্য। রিনির বাবা একটি ঠেলাগাড়ী ভাড়া করে নিয়ে আসে, পরিবারের সবাই ওটাতে উঠে চলতে থাকে কোন এক অজানার উদ্দেশ্যে।
সর্ম্পকিত খবর সমূহ.
November 21, 2024