মোঃ মজিবর রহমান শেখঃস্ত্রী-সন্তান ও নিজ বাড়ি ছেড়ে মামলা আতঙ্কে পালিয়ে থাকায় সন্তান তার বাবাকে খুঁজছে, মাকে কেঁদে কেঁদে বলছে কখন আসবে বাবা। আমি বিস্কুট খাবো। গেল কয়েক দিন থেকে বাবাকে দেখতে না পেয়ে কাঁদছিল ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের কয়েকটি পরিবারের শিশুরা। গত ২৭ জুলাই ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা ৮শ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দূর থেকে মানুষের আওয়াজ পেলেই রাস্তায় ছুটে আসছে কোমলমতি শিশুরা। কিছু না বুঝলেও বাবার অনুপস্থিতি তাদের কাঁদায়। বাবার স্নেহ আদর পেয়ে ছোট থেকে বড় হতে শুরু করলেও বর্তমান পরিস্থিতি দুরে ঠেলে দিয়েছে সেই গ্রাম সহ আশাপাশে বেশকিছু পরিবারকে। নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় আতঙ্কে নারীরাও। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, যারা গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা অনেকেই বাচোর ইউনিয়নের ভোটার নন। কেউ নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে বগুড়া থেকে এসেছেন, কেউ বা হাতিবান্ধা থেকে আবার কেউ এসেছেন ঢাকার সাভার থেকে। এই ইউনিয়নের ভোটার না হয়েও মা-বাবা, স্ত্রী ও শিশু সন্তান রেখে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। মহেশপুর গ্রামের শিশু রাসেল ও ইসরাফিলের মতো কয়েকজন জানায়, আমার বাবা পুলিশের ভয়ে বাড়িতে থাকে না। ছোট ভাই বাবার জন্য কাঁদে। রাতে অনেক ভয় করে। আমাদের কষ্ট হয় আমাদের গ্রামে একটা বাচ্চা মারা গেছে। এই জন্য আমাদের বাবা বাড়িতে থাকতে পারে না। স্কুল যেতে পারি না। বাড়িতে বাজার নেই, মা রান্না করে না। আজ বাবা থাকলে খাবারের কষ্ট হতো না। একদিন, দুইদিন পরপর এখানে দু-তিনটা পুলিশের গাড়ি আসে। মা-চাচিদের কি জানি জিজ্ঞাসা করে। আবার চলে যায়। তখন আরও ভয় লাগে।
উল্লেখ্য, সাত মাস বয়সী নিহত সুরাইয়াকে নিয়ে মা মিনারা বেগম রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ৩ নং –ওয়ার্ডের ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ফলাফলকে কেন্দ্র করে পরাজিত ইউপি সদস্য সমর্থকদের সাথে আইনশৃংখলা বাহিনীর সংর্ঘষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় শিশু সুরাইয়া। তবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন।