মোঃ রায়হান জোমাদ্দার,স্টাফ রিপোর্টার ঝালকাঠিঃ
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিল এখন লাল আর সাদা শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলা ভূমি। বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম। শাপলা রাজ্য হিসাবে পরিচিত। গ্রামের নামেই বিলের নাম সাতলা বিল। এ বিলে লাল আর সবুজের মাখামাখি দূর থেকেই দৃষ্টি কাড়বে পর্যটকদের। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে লালের অস্তিত্ব আরও গাঢ় হয়ে লাল শাপলার রাজ্য চোখ জুড়িয়ে দেয় জাতীয় ফুল শাপলার বাহারি সৌন্দর্য। সূর্যের আভাকেও যেন হার মানিয়েছে এ বিলের পানিতে লতাপাতা গুল্মে ভরা শত সহস্র লাল ও সাদা শাপলা।
এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশি কাঁথা।এ বিলে বর্ষার শুরুতেই ফুটতে শুরু করে শাপলা ফুল।প্রতি বছর মার্চ মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে শাপলার সিজন। প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমির মধ্যে জন্ম নেয়া লাল,নীল ও সাদা রঙের কোটি কোটি শাপলা গুলো এক নজর দেখার জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সের হাজারো মানুষের ভিড় লেগে থাকে।
পর্যটকদের আনাগোনায় দিনদিন মুখরিত হচ্ছে শাপলার রাজ্য খ্যাত সাতলা এলাকা। শাপলার মাঝে বাংলার চিরন্তন রূপ খুজে পাওয়া যায়। তাই শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল।শুধু সৌন্দর্যই নয় সুস্বাদু খাবার হিসেবেও শাপলার বেশ কদর রয়েছে। শাপলা ফুলের অপরূপ শোভা সৌন্দর্য পিয়াসী মানুষকে বিমোহিত করে।
শাপলার অপরূপ শোভা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় মানুষ। হাজারো ফুলের ভিড়ে শাপলা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। শাপলার মতো সরল অথচ নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মন্ডিত বৈশিষ্ট্য অন্য কোনো ফুলে নেই। বাংলাদেশের সকল জায়গায় শাপলা পাওয়া যায়। তাই শাপলাকে জাতীয় ফুলের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মুদ্রায়ও শাপলার প্রতিচ্ছবি রয়েছে। দীঘি-নালা-খাল-বিলে পরিপূর্ণ বাংলাদেশর শাপলা ফুলের সৌন্দর্যে মুখরিত করেছে বলে শাপলাকে জাতীয় ফুল হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিলের লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটক আসে বহু দূর দূরান্ত থেকে।এ বিলে ভ্রমনের জন্য রয়েছে টাকার বিনিময় ছোট আকারের নৌকা। সূর্য উদয় ক্ষনে সূর্য রশ্মি পড়া মাত্রই যেন মন পাগল করা এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভূমিতে পরিণত হয় সাতলা বিল। এ ছাড়া সন্ধ্যার সূর্য অস্তমিত মুহূর্তে মনে হয় যেন মেঘ মালায় ঢেকে যাওয়া এক অপরূপ দৃশ্য।
সাতলা বিলের লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করে ক্ষনিকের জ্বালা যন্ত্রনা দূর করা যায়। এখানে এলে মন কেড়ে নেয়া দৃশ্য দেখে কারোরই মন চায় না আর ফিরে যেতে।
এই এলাকার গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল মানুষ গুলো বিলের পানিতে জীবন সংগ্রামের আয়ের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছে শাপলা তোলাকে। তারা সকালের সূর্যের আলো ফোটার আগেই ছোট ছোট নৌকা নিয়ে নেমে পড়ে শাপলা বিলে শাপলা তোলার জন্য। পানির মধ্য থেকে শাপলা গুলো তুলে এনে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে শতশত পরিবার। প্রায় দু’শত বছর ধরে সাতলার বিল গুলোতে শাপলা জন্ম হচ্ছে। ওই এলাকার প্রায় ৫০ ভাগ অদিবাসী শাপলার চাষ ও বিক্রির কাজের সাথে জড়িত রয়েছে।
এক সময় শাপলার তেমন কোন চাহিদা না থাকায় পানিতে জন্মে পানিতেই মরে পচে যেতো। দিনে দিনে শাপলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছে দিনমজুররা। এখন প্রায় সারা বছর ধরেই শাপলা পাওয়া যাওয়ায়। বিশেষ করে এ অঞ্চলের মানুষ খাদ্যের তালিকায় শাপলাকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
সাতলার বুক জুড়ে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সব শ্রেনী পেশার নানা বয়সের মানুষ ভিড় করছে। শাপলা তোলার কাজে জড়িত দিনমজুর বেলায়েত হোসেন জানান শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে চলছে তার সংসার। প্রতিদিন ৩/৪ শত টাকা আয় হয় তাদের।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিনোদন ও প্রকৃতি প্রেমী মানুষের কাছে নানা সামগ্রী বিক্রী করে সে আর্থিক লাভবান হচ্ছেন। ইসহাক খান পেশায় একজন কৃষক হলেও তিনি এখন তার পেশা পরিবর্তন করে বিলে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সঙ্গে পর্যটক নিয়ে বিলে বিলে ঘুরছেন তিনি। তিনি বলেন, উজিরপুরের সাতলা এবং পাশের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে বিছিয়ে আছে শাপলার বিল।বিলের সঠিক আয়তন জানা নেই কারও।
সৌন্দর্য অবগাহনে আসা দশর্নার্থীরা জানান, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে তারা এতদূর ছুঁটে এসেছেন । শাপলা বিলের সৌন্দর্য অবগাহনে তারা পুলকিত ও মুগ্ধ। স্থানীয়রা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে সাতলা এলাকায় আবাসন ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে ২০১৯ সালে তৎকালীণ বরিশাল জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান সাতলার এ শাপলা বিলের অপার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে এখানে পর্যটন কেন্দ্র করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, সাতলার শাপলা বিল নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সাতলাকে পর্যটন কেন্দ্র করার বিষয়ে পর্যটন কর্পোরেশনকে লেখা হয়েছে। সেখানে পানি, বাথরুম এর ব্যবস্থা থাকবে এ জন্য স্থানীয় ভাবে রেস্টহাউস করার চেষ্টা চলছে। পর্যটকরা যেন ঘুরে ফ্রেশ হতে পারে এ বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে সেখানে সরকারি জমি না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তবে অচিরেই এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে এবং সবার প্রচেষ্টায় পযর্টন কেন্দ্র গড়ে উঠবে ।