উজ্জ্বল কুমার দাস,বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার দোবাড়িয়া এলাকায় স্ত্রীর সহযোগিতায় প্রতিবেশীর কিশোরী মেয়েকে (১২) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মোঃমহিউদ্দিন হাওলাদার(৫০) নামের এক ব্যক্তির নামে। ধর্ষণের সেই ছবি দেখিয়ে পরবর্তীতে খুলনার কোনো এক বাসায় নিয়ে তিনজন মিলে ওই কিশোরীকে আবারও ধর্ষণের অভিযোগ পাওয় গেছে।সর্বশেষ ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর ২০দিন পার হয়ে গেলেও কোনো আইনি সহায়তা পায়নি নির্যাতিতা বা তার পরিবার।উল্টো অভিযুক্তরা মামলা না করার জন্য তাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে নির্যাতিতা কিশোরীর দিনমজুর বাবা জানান,গত ১০ জুলাই আনুমানিক সকাল ৯টার৩০ মিনিটের দিকে আমি কাজের সন্ধানে বাড়ির বাহিরে যাই এবং আমার অসুস্থ স্ত্রী এনজিও-র কিস্তি দিতে পাশের বাড়ি যায়, এই সুযোগে মোঃ মহিউদ্দিন হাওলাদার ও তার স্ত্রী শাহিদা ওরফে সখী বেগম নতুন জামা ক্রয় করে দেওয়ার কথা বলে আমার ছোট মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায়।এসময় তার স্ত্রীর সহায়তায় স্বামী মোঃ মহিউদ্দিন হাওলাদার নিজ ঘরের মাঝে খাটের উপর ১ম বার ধর্ষন করে।এ সময় কৌশলে সখী বেগম সেই ছবি তুলে রাখে।লোক লজ্জার ভয়ে মেয়ে বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে চুপ থাকে।কিছুদিন পর প্রতিবেশী সখী বেগম ও তার স্বামীর সাথে ঝগড়া হলে সখী বেগম আমাকে ও আমার মেয়েকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।আমি ভয়ে বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে মেয়েকে খুলনায় বড় মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই কিন্তু গত ১৩ আগস্ট বিকেলে বড় মেয়ের বাড়ি থেকে তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় সখী বেগম ও কালাম সরদার।অনেক খোঁজা খুঁজির পর দুই দিন পরে ১৫ আগস্ট সকালে রুপসা ভ্যানস্ট্যান্ডে অসুস্থ অবস্থায় আমার মেয়েকে ফেলে রেখে যায় তারা। মেয়ে সবকিছু খুলে বললে আমরা খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করি। ১৭ আগস্ট হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসি মেয়েকে। এরপর র্যাব-৬ খুলনা, রুপসা থানা ও কচুয়া থানায় এ বিষয়ে একাধিক বার গেলেও মেয়ের নির্যাতনের কোনো বিচার পাইনি।এছাড়া তিনি আরো উল্লেখ করেন, দোবারিয়া গ্রামের মোঃমহিউদ্দিন হাওলাদার ও তার স্ত্রী সখী বেগম পেশাদার নারী পাচারকারী ও দেহ ব্যবসায়ী।
নির্যাততা কিশোরীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহিউদ্দিন হাওলাদার তাকে ধর্ষণ করেছে এবং তার স্ত্রী সখী বেগম সেই ছবি তুলে রাখে। পরে তাকে ভয় দেখিয়ে খুলনার একটি বাসায় নিয়ে রাতে মহিউদ্দিন হাওলাদার, বাসচালক কালাম সরদার ও ওই বাড়িতে থাকা আরও একজন তাকে ধর্ষন করে। একি সাথে তারা তাকে জোর করে যৌন উত্তেজনাকর ঔষধ খাইয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় অনেকে নির্যাতিত কিশোরীর সাথে যে অন্যায় হয়েছে এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার আশা করেন।এছাড়াও এলাকার অনেকে অভিযোগ করেন সখী তার বাড়িতে খারাপ মেয়ে এনে দেহ ব্যবসা করান। এই কাজে তার স্বামী সব ধরনের সহযোগিতা করেন। এলাকার কেউ যদি তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করে তাহলে তাদেরকে নানারকম হুমকি-ধামকি ও হয়রানি করেন এই দম্পতি।
ঘটনাটি প্রকাশ্য আসার পর বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদ হাসান জানান,বিষয়টি তাদের জানা ছিল না।তবে বিষয়টি জানার পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে।দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ঘটনাটি নিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর নির্যাতনের শিকার কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(১)/৩০ ধারায় মোঃ মহিউদ্দিন হাওলাদার ও তার সহযোগী স্ত্রী সখী বেগমের নামে কচুয়া থানায় মামলা করেন।মামলা নং-৪, তারিখ-০৪-০৯-২০২২। মামলা হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে কচুয়া থানার অফিসার ইন চার্জ মোঃমনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে মুল আসামী মোঃ মহিউদ্দিন হাওলাদারকে আটক করতে সক্ষম হয়।