মীর এম এম শামীম,ইন্ডিয়া প্রতিনিধিঃবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে রয়েছেন। সেখানে পৌঁছানোর পর ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। এসময় বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।
তবে প্রতিবেশি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে একজন প্রতিমন্ত্রী বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে যাওয়ায় দেশজুড়ে ইতোমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এতে প্রটোকল মানা হয়নি বলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগের পাহাড় জমেছে। জাতি হিসেবে যেহেতু আমরা আবেগ প্রবন তাই কেউ কেউ আবেগ থেকে আবার কেউ কেউ বিরোধিতার কারনে এমন অভিযোগ করছেন বলেই বোধ করছি।
কিন্তু এক্ষেত্রে ভারতে বিদেশি অতিথি, বিশেষ করে রাষ্ট্র প্রধানদের বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানোর বিষয়ে দেশটির রীতি বা রাষ্ট্রাচার কী?
রাষ্ট্রাচার হলো কোন অতিথিকে কে অভ্যর্থনা জানাবেন তা তাদের রাষ্ট্রীয় প্রটোকল বিভাগ নির্ধারন করেন। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী এয়ারপোর্টে যাবেন কি না সেটা তাঁর ইচ্ছের উপর নিভর্র করে। তাঁরা চাইলে যেতে পারেন। তাঁদের এয়ারপোর্টে গিয়ে অভ্যর্থনা জানানোর রীতিই বরং প্রটোকল বহির্ভূত। ইতোপূর্বে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীদের ভারতে সমালোচিত হতে হয়েছে।
এখন দেথা যাক বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী রাষ্ট্র প্রধানদের ভারত কি ভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ভারত সফরে আহমেদাবাদ পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্র প্যাটেল।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফরে যান। সেসময় তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটা ছিল নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত আবেগ। ‘প্রটোকল ভাঙায়’ ওই সময় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
এর আগে ২০১৮ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারত সফর করেন। সেসময় তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত।
২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল চার দিনের সফরে ভারতে যান। দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজিব প্রতাপ রেড্ডি।
একই বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি গিয়েছিলেন। সে সময়ও বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনার দায়িত্বে ছিলেন দেশটির তৎকালীন একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল থেকে তখন বিজেপির সংসদ সদস্য ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়।
শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই যান বিমানবন্দরে যান শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে। সেটা ছিল অনেকটাই ব্যক্তিগত, কেননা নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সেটাই ছিল শেখ হাসিনার প্রথম দিল্লী সফর। কিন্তু ‘প্রটোকল ভেঙে’ বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ায় তখনও নরেন্দ্র মোদি নিজ দেশে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। যদিও রুটিন অনুযায়ী অভ্যর্থনার দায়িত্ব পালন করেন বাবুল সুপ্রিয়ই।
এরপর শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের অক্টোবরে আবার দিল্লিতে যান। তখন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানানোর দায়িত্বে ছিলেন আরেকজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত বিজেপি এমপি দেবশ্রী চৌধুরী। সেসময় নরেন্দ্র মোদি নিজে আর বিমানবন্দরে যাননি।
ভারতীয় প্রোটোকলের রীতি অনুযায়ী এবারও একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি হলেন ভারতের কেন্দ্রীয় রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোস। তিনি সুরাট থেকে নির্বাচিত বিজেপির এমপি।
২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়েফ এরদোয়ান ভারত সফরে গেলে তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান দেশটির একজন মন্ত্রী। পরদিন নরেন্দ্র মোদি এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
২০০৬ সালের মার্চে ভারত সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। সেসময় ‘প্রটোকল ভেঙে’ তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
এরও আগে ২০০০ সালের মার্চের শেষদিকে ভারত সফর করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। সেসময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিং বিল ক্লিনটনকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।
ভারত সফরে আসা অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের মতোই সফরের দ্বিতীয় দিন আজ ৬ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাত করেছেন। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যথাযথ ভাবে রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।