মোঃ কামাল হোসেন খাঁন,মেহরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে গেলঅঅ রোববার থেকে মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামে প্রবাসী স্বামীর বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন রিয়া খাতুন (২০) নামের এক কলেজ ছাত্রী। রিয়া খাতুনের স্বামী তাহের খান দুবাই প্রবাসী হওয়ায় শশুর বাড়ীর লোকজন তাকে মেনে না নিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্ঠা করলে গ্রামবাসীর কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে।
তবে ঘরে উঠতে না দেওয়ায় অনাহারে দ্বিতীয় দিনের মত অবস্থান নিয়ে শশুর বাড়ির বারান্দায় রাত্রি যাপন করছেন রিয়া খাতুন। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ইসলামপাড়ার মরহুম মাসুম আলীর মেয়ে রিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা আঁখি-তাঁরা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রী। রিয়া জানায়- প্রায় ৪ বছর আগে মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ওই গ্রামের আবুল কালামের ছেলে তাহের খানের (২২) সাথে তার পরিচয় হয়। এরপর মোবাইল ফোনে কথা-বার্তার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
তাহের খান বিদেশ যাবে বিধায় রিয়া খাতুনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং জানান প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলে তিনি বিদেশ যাবেন না। অবশেষে গত ৭ মে/২২ তারিখে চুয়াডাঙ্গার এক কাজি অফিস থেকে তারা বিয়ে করেন এবং গত ১৪ মে/২২ তারিখ তাহের খান দুবাই পাড়ি দেন। দুবাই যাবার পর স্বামীর স্ত্রী দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা ও ম্যাসেজ বিনিময় হতে থাকে।
ইতোমধ্যে প্রায় দেড়মাস আগে রিয়া খাতুনের দিন মজুর পিতা: মাসুম আলী মারা যান। এতে মা ও একমাত্র ছোট ভাইকেনিয়ে রিয়ার চোখে অন্ধকার নেমে আসে। এদিকে হঠাৎ স্বামী আবু তাহের ফোন বন্ধ করে দেয়। কয়েক দিন পর রিয়া খাতুনের বড় জা-রুমানা খাতুন তাকে মোবাইল ফোনে জানান- তিন লাখ টাকার জিনিষপত্র নিয়ে আসলে তাকে তার শশুর-শাশুড়ী মেনে নেবেন।
তার বিয়ের পর এমনটিই নাকি ঘটেছিল তার ক্ষেত্রে। রিয়া খাতুনের দাবী- ভালোবাসা অপরাধ নয়। তার পরে বিয়ে। আমি এখন এ বাড়ির বউ। আমি কি শশুর বাড়ি আসতে পারিনা? তবে কেন আমার শশুর-শাশুড়ী এবং ভাসুর আমাকে মেনে না নিয়ে মারধর করে দূরদূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে? আমি স্ত্রীর স্বীকৃতি চাই এবং স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত আমি চুয়াডাঙ্গা ফিরব না।
প্রয়োজনে স্বামীর বাড়িতে মরব। রিয়া খাতুনের ভাসুর বাহার আলী খান জানান- আমার ভাই তাহের খানের বয়স এখন ২৩ বছর পূর্ণ হয়নি। তাই আমরা এ বিয়ে মানি না। রিয়া খাতুনের শশুর আবুল কালাম বলেন- বিয়ের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমার ছেলে তাহের খান দেশে ফিরলে তার কথামত আমরা ব্যবস্থা নেব। এদিকে মুজিবনগর থানা পুলিশ রিয়া খাতুনকে নিরাপত্তার কারণে ঘরে তুলে দিলে শাশুড়ি বানুয়ারা খাতুন তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে দেন।
সোমবার (১২ সেপ্টম্বর) দুপুরে রিয়ার মা রুনা খাতুন বিয়ের কাবিনের কপি হাতে বাগোয়ান গ্রামে পৌছান। তিনি তার মেয়ে রিয়ার বিয়ের স্বীকৃতি চান এবং মেয়ের সাথে ওই বাড়িতে অবস্থান করছেন। অন্যথায় তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান। বিয়ের অন্যতম স্বাক্ষী (ছেলে পক্ষের) বাগোয়ান গ্রামের মিয়ার শেখের ছেলে শাহান শেখ বলেন- রিয়া খাতুন ও তাহের খানের বিয়ে হয়েছে। তাদের বিয়ে বৈধ। এদিকে বৈধ বিয়ে জেনেও ঘরের বউকে মেনে না নিয়ে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া প্রচেষ্ঠা করেন শশুর-শাশুড়ি এতে গ্রামবাসী তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
মুজিবনগর থানার ওসি মেহেদী রাসেল বলেন-যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে আমরা সে চেষ্টায় করছি। গত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে তিনি জানান- রিয়া ও তার মা বর্তমানে তাহের খানের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তাদের রাতের খাওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য টহল পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।