লিপন খান,কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করে থাকেন। একইভাবে প্রতিবন্ধী মেয়ের সুস্থতা কামনা করে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে প্রার্থনামূলক চিঠি দিয়েছেন এক মা।সন্তানের সুস্থতা চেয়ে চিঠিতে মা লিখেছেন, ‘পাগলা বাবার মসজিদে আর্জি দিচ্ছি যে, আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী, আপনার উছিলায় যাতে আমার মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া ভালো হয়ে যায়। আমি আপনার দরবারে ১টি ছাগল দিব। আমার আর্জি কবুল করুন।’কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম টাকা গণনা করার সময় টাকার সঙ্গে মেয়ের সুস্থতা চেয়ে এক মায়ের এই প্রার্থনামূলক চিঠিটি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদটিতে আটটি লোহার দান সিন্দুক রয়েছে। প্রতি তিন মাস পর পর এ সিন্দুকগুলো খোলা হয়। এবারও ৩ মাস ১ দিন পর শনিবার (১ অক্টোবর) দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছে। সিন্দুকগুলোতে এবারও বিপুল পরিমাণ টাকা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি পাওয়া গেছে।টাকা গণনার কাজে রূপালী ব্যাংকের এজিএম ও অন্যান্য কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।
মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি খলিলুর রহমান জানান, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন জানান এই মসজিদে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে সেখানে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনের বাসনা পূরণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিও দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠেছিল।