মোঃ কামাল হোসেন খাঁন,মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
বৃষ্টিতে মেহেরপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে রয়েছেন জেলাবাসী। একটু বৃষ্টি হলেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে যায়। তাছাড়া জেলার অসংখ্য সড়ক ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় পানি জমে থাকায় সড়কে চলাচলকারীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেহেরপুর শহরের কয়েকজন জানান, একটু ভারী বর্ষণ হলেই শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনের সড়কসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় প্রায় হাঁটু পানি জমে যায়। যা যানচলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
শহরের ফৌজদারি পাড়ার মহিদুল ইসলাম জানান, একটু বৃষ্টিতেই আমার বাড়ির সামনে হাটু পানি জমে যায়। যে কারণে বাড়ি থেকে বেরিয়ে শহরে আসতে অসুবিধায় পড়তে হয়।
আমঝুপি উত্তরপাড়ার মনিরুল ইসলাম জানান, একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে থাকে। ভারী বর্ষণ হলেতো কয়েকদিন পানি জমে থাকে। যার কারণে যানচলাচলসহ পথচারীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি বলে তিনি জানান।
সোনাপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিন জানান, আমার বাড়ির সামনের সড়কে পানি জমলে তার সমাধান হলেও অন্য একটি সড়কে পানি জমে জন দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
গাংনী থানা রোডের জিনারুল ইসলাম জানান, এ সড়কে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টির পানি জমে সড়কে চলাচলকারী সকলকেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাছাড়া পাশেই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের চলাচলেও তাদের দুর্ভোগ কম নয়।
গাংনী মহিলা কলেজে যাওয়ার পথেও পানি জমে শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানান রাজু আহমেদ।
নওপাড়া বাজারের লালন জানান, নওপাড়া, লক্ষ্ণীনারায়ণপুর, হিন্দা ও মাইলমারীর হাজার হাজার লোকজনের চলাচল এসড়কে। তাছাড়া ভাটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলাচলকারী শিক্ষার্থীদেরও এসড়কে চলাচল করতে হয়। কিন্তু সড়কের কয়েকটি যায়গা ভেঙে পানি জমে থাকায় কিছু সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। তাছাড়া সড়কের পানিতে কাপড় চোপড়ে কাদাও জড়িয়ে তা নষ্ট হয়ে থাকে।
জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইছার উদ্দীন জানান, ভোমরদহ ও জোড়পুকুরিয়া গ্রামের শতশত শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে যেতে নানা সমস্যায় পতিত হতে হচ্ছে। সড়কের প্রায় ৫০-৬০ মিটার এলাকা জুড়ে পানি ও কাদার সৃষ্টি হয়। যাতে করে শিক্ষার্থীসহ সড়কে চলাচলকারী শতশত মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
গাংনী মোল্লা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার ও লক্ষ্ণীনারায়ণপুর গ্রামের আসাদ এবং ডক্টর্স পয়েন্ট কনসালটেশন সেন্টারের ম্যানেজার সুজন আলী জানান, প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও আমাদের মার্কেটিংয়ে যেতে হয়। কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় গর্তে পানি জমে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাছাড়া ভারী যানবাহন চলাচলে চাকার কাদা ছিটকে প্রায় সময়ই পোষাক-আষাক নষ্ট হয়।
এদিকে নবগঠিত বারাদী ইউনিয়নের মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বর্শিবাড়িয়া ক্লাব মোড়, বামুন্দী নিশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও গাংনী হাইস্কুল ফুটবল মাঠেও অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
গত কয়েকদিন সরেজমিনে গিয়ে জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার অসংখ্য গ্রামে জলাবদ্ধতার চিত্র চোখে মেলে।
এদিকে শহর ও হাট-বাজারের বিভিন্ন জায়গাতেও পানি জমে থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা পড়েন বিপাকে। ব্যবসায়ীরা যে জায়গায় বসে মাছ ও সবজি বিক্রি করেন, সেখানেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। ফলে বেশির ভাগ সবজি বিক্রি করতে না পারায় বাড়ি ফিরিয়ে নিতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে আলাপকালে তিনারা জানান, রাস্তায় পানি জমে থাকায় তারা পার হতে পারেনা। জুতা পরে রাস্তা পার হতে জুতার মধ্যে পানি ঢুকে পড়ে। তারা জানান, যদি ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকতো তাহলে দ্রুত পানি অপসারণ হয়ে যেত। এতে দুর্ভোগে পড়তে হতো না তাদের।
এদিকে বৃষ্টি হলেই রিকশা চালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ভাঙা রাস্তায় পানি জমে থাকা ও কর্দমাক্ত হওয়ায় ভাড়া প্রায় দিগুণ নেওয়া হয়। ভাড়া বৃদ্ধি হওয়ার কারণে অনেকেই প্রয়োজন থাকলেও বাসা থেকে বের হয় না বলেও তারা জানায়।
জন দুর্ভোগ দূরীকরণে অতি জরুরি ভিত্তিতে সড়কগুলো সংস্কার ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগী জনগণ।