স্বপন কুমার রায়,খুলনা ব্যুরো প্রধানঃ আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এক শিফটে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রায় ৯০ ভাগ কাজই শেষ হয়েছে। আর শিক্ষকদের ক্লাস নেয়ার সময়ও বাড়ানো হবে। গেল বৃহস্পতিবার প্রশাসনের বড় রদবদলের অংশ হিসেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে বদলি করা হয়েছে। রোববার (৩০শে অক্টোবর) ছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তার শেষ কর্মদিবস।
আর এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা রাতারাতি স্কুলভবনও নির্মাণ করতে পারছি না। যে কারণে ছাত্র ও শিক্ষক সংখ্যা সবকিছু বিবেচনা করে আমরা দেশের সব স্কুলকে এক শিফটে আনার পরিকল্পনা করেছি। সে ব্যাপারে কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। এতে কোনো স্কুলই বন্ধ হচ্ছে না। কোনো শিক্ষকই চাকরি হারাচ্ছেন না। সবই ঠিক থাকছে। কিন্তু আমরা কাজটিকে ভাগ করছি। যেখানে দুই কক্ষ আছে, সেখানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক থাকছে। আবার যেখানে ভবন করার সুযোগ আছে, সেখানে ভবন করব। সবমিলিয়ে আমরা আশা করছি, দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এক শিফটে নিয়ে আসব।
এককক্ষের স্কুলগুলোকে দ্বিকক্ষের স্কুলের সঙ্গে সংযুক্তি করে ফেললে এককক্ষের জায়গাগুলো কী হবে জানতে চাইলে এই সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা কোনো স্কুলের জায়গাই নষ্ট করছি না। সেখানে আমদের সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার (এটিও), মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন, এককক্ষের স্কুলগুলোকে তাদের অফিস করে দেয়া হবে।
তবে সব জায়গায় একই কৌশল ব্যবহার হবে না বলেও জানান তিনি। বললেন, একেক জায়গার জন্য আমরা একেক ধরনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করব। যে কারণে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগছে। আমরা পর্যায়ক্রমে কাজটি করব। কিন্তু কোথাও স্কুল সংখ্যা কম, এমনও গ্রাম আছে, যেখানে তিন কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র একটি স্কুল, তাতে দুটি কক্ষ আছে। সেখানে কক্ষ বাড়ানো ছাড়া কিছু করার সুযোগ নেই। যে কারণে আমরা বিভাগ অনুসারে, জেলা অনুসারে, উপজেলা অনুযায়ী, যেমন চরাঞ্চলে, হয়তো সেখানে ছাত্রসংখ্যা ৫০ জন, কিন্তু স্কুলটি রাখতে হচ্ছে। কারণ চরে পড়াবার আর কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে বিষয়গুলো ঘটনা অনুসারে পর্যালোচনা করছি এবং নির্ভুলভাবে করার চেষ্টা করছি। আগামী জানুয়ারি থেকেই আমরা এটি করতে পারব। পুরোটা করতে না পারলেও অনেকটা শেষ করব।
সেক্ষেত্রে ক্লাসের সময়টা কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা কিংবা মহানগর এলাকার একটি সময় আছে। কিন্তু গ্রামের স্কুলগুলোতে একটু দেরি করে ক্লাস শুরু হয়। আবার স্কুলগুলো গ্রামে হলেও শিক্ষকরা শহরে থাকেন। যে কারণে যাতায়াতের ব্যাপারটিও আমরা বিবেচনায় রাখছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হলো, শিক্ষকরা ক্লাসে থাকছেন কি-না; সেটির ওপর। কারণ আমরা চাই, শিক্ষকরা যাতে নিয়মিত পাঠদান করেন। আর টিচিং লার্নিং সময়টাও আমরা বাড়াতে চাই। যে কারণে আমরা এক শিফটে নিয়ে আসতে চাচ্ছি। তিন ঘণ্টার জায়গায় আমরা সাড়ে চার ঘণ্টা পাঁচ ঘণ্টা করতে চাই।
ঢাকার অনেক স্কুলে অনেক বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী আছে, সেখানে তাদের একশিফটে নিয়ে আসলে বাচ্চাদের অন্য স্কুলে পাঠানো যাবে না। সেক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের কোথাও কোথাও পরিস্থিতি অনুসারে ভাবতে হবে। এই সংকটটা মহানগরীগুলোতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে। আবার আইডিয়াল স্কুলের পাশে সুন্দর অবকাঠামোসহ স্কুল আছে, সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না, এতে সেখানে শিক্ষার মান বাড়ছে না। অথচ সেখানে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকরা আছেন। শিক্ষার্থীরা গেলে তো স্কুলটা কার্যকর হবে। যে কারণে আমরা চাই, আমাদের দেশের সব স্কুল সমমান সম্পন্ন হোক। যেমন কোনো স্কুল খুব সেলিব্রেটি অবস্থায় আছে, আবার কোনো স্কুলে কেউ নেই। তা হতে পারে না।
উদহারণ দিয়ে তিনি বলেন, যেমন কাঁটাবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুদ্দিন স্কুল আছে। সেখানে সুন্দর অবকাঠামো আছে, শিক্ষকরা খুবই দক্ষ, অঙ্গীকারাবদ্ধ, কিন্তু সেখানে ছাত্র সংখ্যা কম। এখানে অভিভাবকদের একটি বড় ভূমিকা আছে। আপনারা অনেকে দিল্লি মডেলের কথা বলেছেন। আমাদের মৌলভীবাজারে দিল্লি মডেলের স্কুল আছে, সেখানে পৌর এলাকায় ১৪টি স্কুল আছে। এগুলো বাংলাদেশের সেরা। এতে বোঝা যায়, জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকরা সম্পৃক্ত হলে, যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুবই মানসম্পন্ন হতে পারে। কিন্তু সবাই একটি জায়গা, একটি স্কুলকেই বেশি পছন্দ সেখানে যেতে চাচ্ছেন।