মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ জীবন দিয়ে হলেও মাঠ রক্ষা করবো, এমন কথা বলছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের চৌংগা খাতা গ্রামের ষাট উর্ধ বৃদ্ধ এক নারী। মাঠ আছে, মাঠ থাকবে। সম্প্রতি গড়েয়ায় খেলার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবার উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন একে অপরের বিরুদ্ধে। জমির বায়নামা সূত্রে মালিক বলছে এটা কোন মাঠ নয়, রেকডিয় ব্যক্তি মালিকানা জমি। স্থানীয়রা বলছে দেড়শত বছরের অধিক সময় ধরে যুব সমাজ মাঠটিতে খেলা করে আসছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা শহর হতে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নয়া গড়েয়া হাট। হাটের পাশেই দেড়শত বছরের অধিক সময় ধরে প্রায় দুই একর এলাকা জুড়ে খেলার মাঠ। এলাকার যুবক-কিশোর-শিশুরা নিয়মিত খেলা-ধুলা করে আসছে মাঠটিতে। হঠাৎ করে মাঠ বিক্রীর কথা শুনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। মাঠ রক্ষায় নানা কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি মাঠকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে, এতে উভয় পক্ষের আহত হন কয়েকজন। এঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যখন তখন বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারনা অনেকের। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অফিসার ইনচার্জ সহ প্রশাসনের অনেকেই ইতিমধ্যে এলাকাটি পরিদর্শণ করেছেন। ঐ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ সুফিয়া বেগম বলেন দু’শ আড়াই’শ বছর ধরে এই মাঠ চলতেছে। আমার বাপ, দাদো, চৌদ্দ গুষ্টি পর্যন্ত এই মাঠে খেলা করেছে। আমাদের ছেলে সন্তানেরা এখন খেলছে। মাঠ রক্ষায় যদি জীবন দিতে হয় তাতেও প্রস্তুত আছি। মাঠ আছে, মাঠ থাকবে। দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রেফারীর দায়িত্ব পালন করে আসা রঞ্জন কুন্ড বলেন আজকে হঠাৎ করে কিছু ভূমি দস্যূ লাঠি সোটা নিয়ে মাঠ দখল করতে আসে। আমাকে মাঠ থেকে বের করে দেয়। পরে এলাকার মানুষ এসে মাঠ দখলে বাধা দেয় এবং তাদের বের করিয়ে দেয়। সাবেক ইউপি সদস্য আমির হোসেন আমিন বলেন আমার বাবা, বাবার বাবারা এই মাঠে খেলেছেন। আমরা খেলেছি, এখন আমাদের সন্তানেরা খেলছে। আমাদের দাবী এই মাঠের জন্য আইনগত লড়াই করতে হলে তাই করবো। জীবন দিয়ে মাঠ রক্ষা করতে হলে তাই করতে প্রস্তুত বলে জানান অনেকে। বায়নামা সূত্রে জমির মালিক স্বজল কুমার চৌধুরী বলেন কাগজ যাচাই করে জমি ক্রয় করি। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তির নেতৃত্বে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারী আঘাত করে। স্থানীয় জনগণ না বাচালে আজকে কথা বলার সুযোগ পেতো না। বায়নামা সূত্রে আরেক জমির মালিক ফখরুল ইসলাম জুয়েল বলেন জমির কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই শেষে উকিলের পরামর্শে খাজনা-খারিজ দেখে সঠিক নিয়মে জমির বায়নামা করা হয়। সেই জমিতে সাইনবোর্ড দিতে গেলে স্থানীয়রা হামলা চালায়। ওয়ারিশ সূত্রে জমির প্রকৃত মালিক নাজমুল হুদা শাহ এ্যাপোলো বলেন গড়েয়া মাঠটিকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা। আমার জন্ম ১৯৭০ সালে, জন্মের পর থেকে দেখে আসছি এবং পূর্ব পুরুষরাও দেখে আসছে। কিন্তু কে বা কাহারা ঠাকুরগাঁও থেকে মাস্তান বাহিনী নিয়ে গিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তা প্রতিহত করে। জমির আরেক মালিক নুরুল হুদা বলেন আমরা এই জমির প্রকৃত মালিক, আমাদের বৈধ কাজপত্র আছে, তাই আমরা হস্তান্তর করেছি। জমির আরেক মালিক সোহেল শাহ বলেন, আমরা জমির মালিক কিন্তু আমরা জানতেও পারলাম না, কে জমি ক্রয় করলো আর কে বিক্রয় করলো। ঠাকুরগাঁও শহর থেকে মাস্তানবাহিনী ভাড়া করে মাঠ দখল করতে আসলে স্থানীয়রা তা প্রতিহত করে। এছাড়াও এব্যাপারে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। জমির আরেক মালিক জাহিরুল ইসলাম বলেন আমরাও জমির মালিক কিন্তু এব্যাপারে কিছুই জানি না। স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন এই চক্রটি ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় ভেজালিয়া (দ্বন্দ্ব সংক্রান্ত) জমি ক্রয় করে। আর মাস্তান বাহিনী দিয়ে দখল করে। এর সাথে জড়িত আছেন একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি স্কুল ফাঁকি দিয়ে এই সবকার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। একই কথা বলেন লেলিনসহ অনেকে।
গড়েয়া ইউপি চেয়ারম্যান রইচ উদ্দীন সাজু বলেন কাগজ যার জমি তার, জমির প্রকৃত মালিক বিক্রী করতেই পারে। বিষয়টি নলেজে আছে। উশ্ঙ্খৃলতা না করে সমঝোতার মধ্য দিয়ে সমাধান করাটাই ভালো।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন সম্প্রতি গড়েয়া হাটের পাশে যে মাঠটি নিয়ে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সেই মাঠটি নিয়ে কোন ধরনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি না ঘটে সে ব্যাপারে অফিসার ইনচার্জকে (ওসি)কে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। কোন ব্যক্তি যেন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। এই মাঠি বিক্রয়ের মাধ্যমে জনগণের স্বার্থ যেন ক্ষুন্ন না হয়, সে বিষয়টি দেখা হবে।