মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরাঃ ১৯৭১ সালের এ দিনে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা মান্ধাতার আমলের থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাথে রাস্তায় নেমে আসে মুক্তিপাগল আপামর জনতা।
দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেদিনের সাহসী সন্তানরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। পাক হানাদার ও তাদের দোসররা মা-বোনের ইজ্জত হরণ করেছিল। ধ্বংস করতে চেয়েছিল বাঙ্গালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে। শত্রুর বুলেটের এত সব আঘাত সহ্য করেও সাতক্ষীরার সন্তানরা ১৬টি সম্মুখ যুদ্ধের মোকাবেলা করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধের ৮ম ও ৯ম সেক্টরের আওতাধীন সাতক্ষীরা জেলা। প্রথম ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল সাতক্ষীরার ভোমরায়। ৭১ এর ২৫ মার্চের পর তৎকালিন পাজ্ঞাবি এসডিও খালেদ মাহমুদকে গ্রেপ্তার, পাকিস্থানি পতাকায় অগ্নি সংযোগ, অস্ত্রাগার লুট, পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দিয়ে দামাল সন্তানরা যে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিল তার সফল সমাপ্তি ঘটে ৭ ডিসেম্বর। এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমূখী আক্রমণে আতংকিত হয়ে পাক সেনারা দ্রুত সাতক্ষীরা ছেড়ে খুলনা অভিমুখে পালিয়ে যায়। সাতক্ষীরাকে শত্রমুক্ত করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে চুমু খায় এবং স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তলন করে।
১৯৭১ সালের ৬ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তান বিরোধী মিছিলে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। আর এখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া। মুক্তিযুদ্ধের খরচাদি বহনের জন্য সাতক্ষীরা ট্রেজারী হতে অস্ত্র লুট আর ন্যাশনাল ব্যাংক হতে অলংকার টাকা পয়সা লুটের মধ্য দিয়ে শুরু মুক্তির সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের ৮ম ও ৯ম সেক্টরের আওতাধীন ছিল সাতক্ষীরা জেলা। প্রথম ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল সাতক্ষীরার ভোমরায়। ৭১ এর ২৫ মার্চের পর তৎকালিন পাজ্ঞাবি এসডিও খালেদ মাহমুদকে গ্রেপ্তার, পাকিস্তানি পতাকায় অগ্নি-সংযোগ ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন, অস্ত্রাগার লুট, পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দিয়ে দামাল সন্তানেরা যে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিল তার সফল সমাপ্তি ঘটে ৭ ডিসেম্বর।
৮ম ও ৯ম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৭ মে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে আবদুল গফুর এমএনএ ও ইপিআর সুবেদার আইউবের নেতৃত্বে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় পাক সেনাদের দু’শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘন্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শহীদ হয় তিন জন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হয় আরো দু’জন মুক্তিযোদ্ধা। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউন-শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।
এ সব যুদ্ধে শহীদ হয় ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। লাইটের আলোয় অসুবিধা হওয়ায় ৩০ নভেম্বর টাইম বোমা দিয়ে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভীত করে ফেলে পাক সেনাদের। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে পাক সেনারা। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বিনেরপোতা ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে পাক বাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় জ্বলে ওঠে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা।