কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। বুধবার (৪ জানুয়ারি) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে চারপাশ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের দেখা মিললেও হিমেল ঠাণ্ডা হাওয়ার কারণে বাইরে লোক সমাগম কম।
ফলে সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত দোকানপাট বন্ধ থাকে। টানা শৈত্যপ্রবাহের ফলে পশুপাখি, গবাদিপশু ও বয়স্ক মানুষরা শীতকষ্টে ভুগছেন।
এক দিকে জিনিষপত্রের ঊর্ধ্বগতি অপরদিকে শীতের কারণে কাজকর্ম কমে যাওয়ায় চরম কষ্টে ভুগছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এ দিকে তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকায় বিপাকে পরেছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদনদী অববাহিকার মানুষ।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার নাজিরা খেজুরের তল এলাকার নাজমা বেগম (৩৫) জানান, জিনিষপত্রের যে দাম। শীতোত মানুষটা কাজ-কামোত বেরবার পায় না। ছয়জনের সংসার চালবারে পাবার নাগছে না।
পার্শ্ববর্তী কাশিয়াবাড়ী গ্রামের মফিজল (৬৫) বলেন, এদোন শীতোত একটা কম্বলও পাইলং না। গরীব মানুষ এবার শীতোত কাঁইত হয়া গেইছে।কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর মাধবরাম এলাকার অটোরিক্সাচালক মজিবর রহমান (৫০) জানান, ‘বাপুরে ঠান্ডাত হাত-পাও শিক নাগি যায়। কাঁশতে কাঁশতে অবস্থা খারাপ। দুই দিন বসি আছলং। পেটের দায়ে ফির অটো নিয়া বেড়াইছি।’ একই কথা জানালেন পৌর এলাকার ঘোষপাড়ার হোটেল শ্রমিক এরশাদুল জানালেন, ‘মহাজনের কথা ভোর থাকি কামোত আসা নাগবে। এই ঠান্ডাত কেমন করি বাড়ী থাকি বেইর হই। ঠান্ডা পানি নাড়তে নাড়তে গাত জ্বর ধরছে।’
এদিকে ঘন কুয়াশা আর অতিরিক্ত শিশির ঝড়ার ফলে সদ্য রোপনকৃত বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকরা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড় এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন ও হলোখানা ইউনিয়নের টাপুরচর এলাকার কৃষক ওমেদ আলী (৩৫) জানান, ‘রোদ না পাওয়ায় বীজতলা লালচে হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে বীজতলা পানিতে ডুবে যাচ্ছে বীজও সেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না।’ বীজতলা নষ্ঠ হয়ে গেলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেই সাথে সঠিক সময় রোপন করা সম্ভব হবে না।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা শৈত্য প্রবাহের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের খুব সমস্যা হচ্ছে। তারা কাজে যেতে পারছে না। ফলে আয় বঞ্চিত হয়ে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। প্রতিবছর বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বৃত্তবানরা গরম কাপড় দিয়ে সহায়তা করলেও এখন পর্যন্ত কোন সাড়া মিলছে না। এই ইউনিয়নে ৬/৭ হাজার কম্বলের চাহিদা থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে পাঁচশত কম্বল পাওয়া গেছে এবং তার বিতরণ করা হয়েছে।কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশা থেকে বীজতলা নিরাপদ রাখতে আমরা মাঠ পর্যায়ে চাষীদেরকে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি বীজতলার কোন ক্ষতি হবে না।
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ওয়ারলেস অপারেটর ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (চ:দা:) তুহিন মিয়া জানান, বুধবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলেও জানান।