মোঃ মজিবর রহমান শেখঃ চাল কুমড়া আমাদের দেশে জনপ্রিয় একটি সবজি। ঘরের চালে ও জমিতেও বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ সবজি ফলানো হয়। ঠাকুরগাঁও জেলায় এটি পানি কুমড়া ও জালি নামেও পরিচিত। এটি পুষ্টিকর একটি সবজি। তরকারি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও মোরব্বা, হালুয়া, পায়েস এবং কুমড়া বড়া তৈরী করেও খাওয়া যায়। শুধু চাল কুমড়াই নয় এর কচি পাতা ও ডগাও শাক হিসেবে খাওয়া হয়। ঠাকুরগাঁও থেকে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে চাল কুমড়া (পানি কুমড়া)। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন চাল কুমড়া বোঝাই ট্রাক দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ জুলাই রবিবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়দেশ্বড়ী বাজারে গিয়ে দেখা যায়। চাল কুমড়া রপ্তানীর উদ্দেশ্যে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। সেখানে চাল কুমড়াগুলোকে সাদা পরিস্কার কাগজে পেচানো হচ্ছে, যাতে করে ময়লা-মাটি-ধুলা গায়ে না লাগে এবং সেগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় নিতে ট্রাকের মধ্যে যাতে করে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এর পর চাল কুমড়াগুলোকে পরিস্কার-স্বচ্ছ একটি বস্তায় ঢুকিয়ে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। বড়দেশ্বড়ী গ্রামের ব্যবসায়ি রইসুল বলেন, প্রতি বছর চাল কুমড়া ঢাকায় প্রেরন করে থাকি। এছাড়াও মাঝে মধ্যে দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও চাহিদা পেলে সেগুলো সরবরাহ করে থাকি। গত এক মাস যাবৎ প্রায় ১০/১৫ ট্রাক চাল কুমড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়েছি। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খোচাবাড়ি এলাকার সবজি ব্যবসায়ি সফির উদ্দিন জানান, ট্রাক ভাড়া বেড়েছে। এখন ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রাক ভাড়া প্রায় ২০ হাজার টাকা। একটি ট্রাকে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার পিস চাল কুমড়া পাঠানো যায়। ভাড়া বৃদ্ধির কারনে লাভ হচ্ছে কম। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় মোট ৩ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। ঠাকুরগাঁও ২৫০ শর্য্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: মো: মিনহাজ কৌশিক বলেন, চাল কুমড়ার স্বাস্থ্যগত অনেক উপকারের বিষয়ে আমরা জেনেছি। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার রয়েছে। যক্ষা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিক সহ বহু রোগের উপশম করে চাল কুমড়া। এটি রোগ প্রতিরোধ করে, ব্রেইন ভাল রাখে, যক্ষা রোগের মহা ঔষুধ, ওজন ও মেদ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বক ও চুলেল যত্নে বিশেষ উপকারী এই সবজি। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাল কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে আকচা, জগন্নাথপুর, গড়েয়া, সেনুয়া, বড়গাঁও, নারগুন সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বেশি চাষ হয়ে থাকে। উল্লেখিত এলাকার কৃষকেরা বিগত কয়েক বছর থেকে সবজির ন্যার্য্য মূল্য পাচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও থেকে চাল কুমড়া সহ বিভিন্ন সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে বলে, চাহিদা বেড়েছে, কৃষকও ভালো দাম পাচ্ছেন। এ বছরও তারা ন্যার্য্য মূল্য পাবেন বলে মনে করছি।