বাঁধন প্রাধান,পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের আলোয়াখোয়া ঠাকুর মন্দিরের পুজারীরা পুজা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছে । রবিবার দুপুরে ওই এলাকার হিন্দু ধর্মীয় নেতারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তাদের ভীতি ও নিরাপত্তার কথা তুলে ধরেন। পরে আটোয়ারী থানা পুলিশ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানাযায় দীর্ঘদিন ধরে এই মন্দিরের ১২ একর জমি দখল করে মন্দিরে তালা লাগিয়ে পুজা কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। গত ২৮ আগষ্ট মন্দিরের জমি দখলের অভিযোগে নীলফামারী—৩ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা মেজর (অবসর প্রাপ্ত) রানা মোহাম্মদ সোহেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট । এই আদেশের প্রেক্ষিতে পরদিন মন্দিরের তালা খুলে দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু এখনো এমপি রানার লোকজনের আক্রমনের আশংকা করছেন পুজারীরা। জানাযায় বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা এবং একটি সংবাদ ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে এমপি রানার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের জমি দখল, হিন্দু মন্দির ও দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে মন্দিরের জমি উদ্ধার ও পুজা অর্চনা করার সুযোগে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন আলোয়া খোয়া ঠাকুর মন্দিরের রক্ষনাবেক্ষণ কমিটির সদস্য ও পুজারী বিরেন্দ্র নাথ সিংহ। প্রতিকার না পেয়ে আদালতে রিট করেন তিনি। এই রিটের প্রেক্ষিতে এমপি রানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয় আদালত।
পুজারী বিরেন্দ্র সিংহ জানায়, মন্দিরের তালা খুলে দিয়েছে। কিন্তু আমরা পুজা কার্যক্রম পরিচালনা করতে ভয় পাচ্ছি। কারন এমপি রানার লোকজন আমাদেরকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। তাই আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছি। আটোয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা জানান আমরা মন্দির এলাকা পরিদর্শন করেছি। পুজারী এবং স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে আলোচনা করেছি। পুজা অর্চনা যাতে নির্ভিগ্নে করতে পারে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুল আলম হালিম জানান, বিষয়টি আমি জানি । আদালতের কাগজ এখনো পাইনি। ওই এলাকার হিন্দু ধর্মালম্বি কিছু মানুষ এসে তাদের আশংকার কথা জানিয়েছে। আমি সবধরনের নিরাপত্তা ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। খবরে প্রকাশ আটোয়ারির আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের বালিয়া মৌজার ১২ একর দেবোত্তর সম্পত্তিও দখল করেছেন এমপি রানা। জমিদার শ্যামা প্রসাদ রায় আলোয়াখোয়া রাশ মন্দিরের জন্য ওই জমি দান করেছিলেন। ওই মন্দিরের সেবায়েত অনিল চন্দ্র রায় ও তার ভাই সুনীল চন্দ্র রায় জমি দেখাশোনা করতেন। মন্দিরের জমি দখল করতে এই দুই ভাইকে ম্যানেজ করে ২০ বছরের জন্য ১২ একর জমি লিজ নেন এমপি রানা। পরে জমি ফেরত দেওয়ার দাবিতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় পঞ্চগড় আদালতে মিসকেস মামলা করে। আদালত মন্দিরের কাছে জমি ফেরত দেওয়ার পক্ষে রায় দেন। স্থানীয়দের অভিযোগ জোর জবরদস্তি করে, আইনের ফাঁদে ফেলে, দারিদ্র্তার সুযোগ নিয়ে বহু মানুষের জমি চা বাগান, চা কারখানা এবং বেশ কয়েকটি ব্যাবসায়ি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এমপি রানা। অনেক মানুষ আবাদী জমি, ভিটাবাড়ি হারিয়ে এখন নিশ্ব হয়ে পড়েছেন। আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাক্কারুল আলম জানান, এখানে অনেক সংকট। এখানকার মানুষের জমি দখল হয়েছে। নদীর জমিও দখল হয়েছে। এমপি রানার মালিকানাধিন চা বাগান অর্গানিক অরিজিন ফার্মের প্রকল্প কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, আমরা কারও জমি দখল করিনি। পুজারীদের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই । আমরা তাদের পুজা অর্চনায় কোন বাঁধা সৃষ্টি করছিনা। এটা একটা বানোয়াট কথা।