পৃথিবীর ইকোসিস্টেম ক্রমেই ক্ষতিগ্রস্ত ও ভয়ঙ্কয় হয়ে উঠছে। মানবজাতির হস্তক্ষেপের কারণে ইকোসিস্টেমের বেশিরভাগ প্রধান সূচক নিরাপত্তা সীমা ইতোমধ্যেই অতিক্রম করেছে। ফলে তা আর মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এমন গবেষণার কথা জানায়। গবেষণাটি সম্পাদন করেছে ডেনমার্কের ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনের একদল গবেষক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার তাদের এ গবেষণা মার্কিন বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে পৃথিবীর লাইফ সিস্টেম অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। এটি আগের চেয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর পেছনে মানবসভ্যতার বিভিন্ন কার্যকলাপকে দায়ী করা হয়েছে। তাদের কার্যকলাপের জন্যই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
জার্নালে বলা হয়েছে, ওই গবেষণায় ২৯ জন গবেষক অংশ নিয়েছেন। তারা ৯টি বিষয়ে পৃথিবীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন। এ সময়ে ৯টির মধ্যে জীবজগতের টিকে থাকা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিষ্কার পানির পর্যাপ্ত ব্যবহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর ৬টিই নিরাপদ সীমা অতিক্রম করেছে। এ ছাড়া সূচকগুলোর মধ্যে আটটির অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। সূচকে কেবল ওজোন স্তরের অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে।
গবেষকদলের প্রধান ক্যাথেরিন রিচার্ডসন বলেন, আমরা আসলে জানি না যে এই পরিস্থিতি ও বিপর্যয় থেকে কতটা উন্নতি করতে পারব। তবে আমরা আশাবাদী। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া মানেই মানবসভ্যতার শেষ নয়। এর মানে এমন নয় যে এখনই সব হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে। তবে এর ফলে অবশ্যই পৃথিবীর লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।
ক্যাথেরিন রিচার্ডসন বলেন, আমরা এ অবস্থাকে মানুষের শরীরের সাথে তুলনা করতে পারি। এটিতে যেমন রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া মানেই নব শেষ হয়ে যাওয়া নয়। তবে এটি যেমন শরীরের জন্য আশঙ্কার। তেমনি এভাবেও পৃথিবীর জীবনে এটি আশঙ্কার।
গবেষকদের প্রধান এ সমস্যার জন্য মানুষের অতিমাত্রায় নির্বনীকরণ, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, প্লাস্টিক, বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, মানুষের তৈরি কয়েক হাজার রাসায়নিক প্রতিনিয়ত পরিবেশে মিশছে। আমরা এমন আশঙ্কার সময়ে মানুষের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া দেখে ক্রমাগত অবাক হচ্ছি।
জার্নালে বলা হয়েছে, ৯টি সূচকের মধ্যে তিনটি সূচক কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। এগুলো হলে সমুদ্রে অ্যাসিডের পরিমাণ, ওজোনস্তরে ছিদ্র এবং বিভিন্ন বায়ুদূষকের উপস্থিতি। তবে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করেছেন যে দ্রুতই সমুদ্রের পানিতে অ্যাসিড নিরাপদ সীমা অতিক্রম করবে।