মোঃ ওসমান গনি ইলি,কক্সবাজারঃ বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ আয়োজন চলবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে।
সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে থাকছে- সার্কাস প্রদর্শনী, বীচ বাইক র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, কনসার্ট, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান।
জমকালো এই আয়োজনের প্রস্তুতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব আয়োজন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজার এয়ারপোর্ট থেকে কলাতলী মোড় পর্যন্ত সব প্রবেশমুখে তোরণ নির্মাণ করে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানানো হবে। হোটেল-মোটেল, রেঁস্তোরা, সব রাইডে স্পেশাল ডিসকাউন্ট, লাইটিং এবং ইভেন্টের মাধ্যমে পর্যটকদের মাতিয়ে রাখা হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা সব প্রস্তুতি শেষ করতে পারবো।
এই উপলক্ষে হোটেল মোটেল রিসোর্টে ৬০ থেকে ৫০ শতাংশ এবং রেস্তোঁরায় ১৫ শতাংশ ও কক্সবাজারগামি বিমান ও দূরপাল্লার বাস কর্তৃপক্ষ মূল্যছাড়সহ বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সৈকতের লাবনীর পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, জোরেশোরে চলছে পর্যটন মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি। লাবণী পয়েন্টের হোটেল কল্লোল প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে ট্যুরিস্ট পুলিশের গেইট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে তৈরি করা হচ্ছে মেলার স্টল।
পর্যটন মেলাকে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করতে ২০০টির মতো স্টল স্থাপন করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে আটটায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের বুকে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে তুলে ধরতে ও কক্সবাজারকে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে এই আয়োজন করা হচ্ছে। কক্সবাজারকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে এবার ভিন্নতা আনা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে, সপ্তাহব্যাপি পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল শুরু হবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর। তবে এর আগে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় উন্মোচন হবে থিম সং। আর ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই সকাল ১০টায় হতে ঘন্টাব্যাপি চলবে সৈকত এলাকা পরিচ্ছন্নতার অভিযান।
আর আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত হবে শিশুদের চিত্রাকংন ও রচনা প্রতিযোগিতা। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় সৈকতের লাবনী পয়েন্ট হতে শুরু হয়ে সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে পুনরায় লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত থাকছে বর্ণাঢ্য র্যালী। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধন করা হবে পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে থাকছে বৃক্ষরোপন ও আলোচনা সভা। আর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট হতে মহেশখালী জেটি পর্যন্ত চলবে নৌ র্যালী। আর প্রতিদিন বিকাল ৩টায় বিনামূল্যে চলবে সার্কাস প্রদর্শনী। বিকেল সাড়ে ৪টায় বীচ বাইক র্যালী, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এরপর ডিজে শো এবং আতশবাজি প্রদর্শনী। ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় রোড শো, বিকেল সাড়ে ৪টায় জেটস্কি শো ও সেমিনার।
২৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় ঘুড়ি উৎসব, বিকেল সাড়ে ৪টায় সেমিনার, সাড়ে ৫টায় ম্যাজিক শো, সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ফায়ার স্পিন, সন্ধ্যা ৭টায় লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ৯টায় ফানুস উৎসব, রাত ১১টায় ডিজে শো।
৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় সার্ফিং প্রদর্শনী, বিকেল ৩টায় ঘুড়ি উৎসব, বিকাল ৪টায় বীচ ম্যারাথন, বিকেল ৫টায় সেমিনার, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ডিজে শো।
১ অক্টোবর বিকেল ৫টা সেমিনার ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ২ অক্টোবর বিকেল ৪টায় বীচ ভলিবল, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ৮টায় বিদেশি নাগরিকদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত ১১টায় ডিজে শো।
৩ অক্টোবর বিকেল ৩টায় সেমিনার, বিকেল ৪টায় পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান, বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত গ্র্যান্ড সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কনসার্ট, রাত সাড়ে ১১টায় ডিজে শো ও রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে আতশবাজি প্রদর্শনী।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, মেলায় পর্যটন বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, ঘুড়ি উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফানগেম, ক্ষুদ্র-নৃ-তাত্তি¡ক উৎসব, ফানুস উৎসব, ম্যাজিক শো, আতশবাজি, ডিজে শো ও কনসার্ট।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় মানের তারকা শিল্পীরা অংশ নিবেন। আর মেলায় অংশগ্রহণকারি স্টলগুলোতে কক্সবাজারের পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে থাকবে আচার, শুঁটকি ও পিঠাসহ হরেক রকমের আয়োজন।
সী-গাল হোটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান সিদ্দিকী রুমি বলেন, পর্যটন নগরীতে পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল আয়োজন হচ্ছে এটা আনন্দের। মেলা উপলক্ষে হোটেলের প্রতিটি কক্ষে ৫০ শতাংশ এবং রেস্তোঁরায় ১০ শতাংশ বিশেষ ছাড় দেয়া হচ্ছে। পর্যটকরা বিশেষ ছাড়ে কক্সবাজার উপভোগে ভ্রমনে আসুক এবং সপ্তাহব্যাপি উৎসব উদযাপন করুক এটাই আমাদের চাওয়া।
কক্সবাজার জেলা রেস্তোঁরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, জেলা রেস্তোঁরা মালিক সমিতির আওতাধীন ১১০টি রেস্তোঁরা রয়েছে। মেলা উপলক্ষে এসব রেস্তোঁরা ১৫ শতাংশ বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিশেষ ছাড় আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ০৩ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। কোন ব্যবসায়ী যদি ঘোষিত ১৫ শতাংশ না দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল আয়োজন এটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমরা আশা করি, আগামীতে আরো বড় পরিসরে এই আয়োজন হবে কক্সবাজারে।