বদরুদ্দোজা প্রধান,পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ উত্তরের সমতল জেলা পঞ্চগড়ের ৫ উপজেলায় নির্বাচন ঘিরে আলোচনা জমে উঠেছে। প্রায় সর্বত্রই এখন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বৈঠক, আড্ডা চলছে। প্রার্থীরা ঘুরছেন হাট বাজার গ্রামে গঞ্জে। অনেকে নিজেদের জনপ্রীয়তার জরিপ মাপছেন আবার অনেকে নিজেকে তুলে ধরছেন জনগণের সামনে। গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থীরাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে তারা সবাই প্রার্থী। তবে প্রত্যেক উপজেলায় আওয়ামীলীগের একাধিক দলীয় নেতা কর্মী নিজেদের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। দলীয় ভাবে কাওকে মনোনয়ন দেয়া হবেনা আওয়ামীলীগের এমন ঘোষণার পর অনেক নেতাই স্বস্থি বোধ করছেন। সহজেই তারা প্রার্থী হতে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকে। এমন সিদ্ধান্তে বর্তমান চেয়ারম্যানদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মী সহ স্থানীয় ভোটাররা। এদিকে বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী থাকলেও তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। অনেকে ভয়ও পাচ্ছেন। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তারা। তাদের অনেকে বলছেন নির্বাচন আদৌও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এজন্য অনেক প্রার্থী ভেতরে ভেতরে গণসংযোগ শুরু করলেও প্রকাশ্যে কোন কিছুই বলছেন না তারা।
বর্তমানে তেঁতুলিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক। গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তারুল হক মুকুর সাথে প্রতিদান্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এবারের নির্বাচনে দুজনেই প্রার্থী। নতুন করে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহসভাপতি ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল লথিব তারিন প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। এছাড়া আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আনিছুর রহমান, বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা কুদরতি-খুদা- মিলন প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহীনও দলীয় সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে মাঠে নির্বাচনমুখী কাজ করছেন তিনি। ব্যবসায়ি মিজানুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানিয়েছেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম। তিনি সদর উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি আবু দাউদ প্রধানকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে আবু দাউদ প্রধান দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম পল্লব, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক নুরুল হুদাও প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। সাবেক সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধানের ছেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক শাহনেওয়াজ প্রধান শুভ প্রার্থীতা ঘোষণা করে গণসংযোগ শুরু করেছেন।
আটোয়ারী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনিসুর রহমানকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারেও তারা দুজনেই প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। এছাড়া জেলা পরিষদ সদস্য ও আটোয়ারী উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র ঘোষ প্রার্থী হতে পারেন বলে জানাগেছে। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যন আবদার হোসেনের ভাই ব্যবসায়ি খলিলুর রহমানও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।
বোদা উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আলম টবি গত নির্বাচনে বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারেও তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামী নেতা সফিউল্লাহ সুফিও প্রার্থী হতে পারেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক রবিউল আলম সাবুল, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও সাবেক রেল মন্ত্রীর এপিএস রাসেদ প্রধান এবং উপজেলা কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক সায়েদ জাহাঙ্গীর হাসান সবুজ প্রার্থী হতে পারেন। উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক আব্দুল মান্নান কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আশায় আছেন।
দেবীগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মালেক চিসতী গত নির্বাচনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জর্জ এবারেও প্রার্থী হলেও চিসতী শারীরীকভাবে অসুস্থ। তার ছেলে মাসুস মাসরাফী যুক্তি এবার উপজেলা নির্বাচনে লড়বেন। অন্যদিকে যুবলীগ নেতা রাজু আহমেদ মিঠুও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে । এই উপজেলার বিএনপির নেতৃবৃন্দও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।