ডেক্স রিপোর্টঃ ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলনকারীরা গণভবনের দিকে অগ্রসর হলে তিনি পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। তার এমন পরিস্থিতিতে শঙ্কায় পড়েছে ভারত।
শনিবার (১৭ আগস্ট) সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স২৪-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসে এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এরপর গত ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হলে আন্দোলন ভয়াবহ রূপ নেয়। এরপর গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তার এ পতনের বিষয়টি ভারতকে শঙ্কায় ফেলে দেয়। কেননা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় মিত্র ছিলেন তিনি।
ভারতীয় লেখক সম্পাদক রাহুল ত্রিপাঠী বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে শেখ হাসিনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ভারত। ফলে এখন তাদের এমন শঙ্কায় পড়তে হয়েছে।
ভারতে বসে হাসিনার বিবৃতি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অন্তরায় : প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উভয়ই গভীর সম্পর্ক গড়ার জন্য নিজ দেশে গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণকে উপেক্ষা করেছেন। শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কর্মকাণ্ডকেও ভণ্ডামি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
এতে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই শেখ হাসিনার পতনের শঙ্কা ছিল। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া কর্মসূচির মাধ্যমে তার শাসনের অবসান ঘটেছে। কিন্তু গত ৭ জানুয়ারি যখন অস্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত হ জানুয়ারির নির্বাচনকে অস্বচ্ছ বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত ও চীন এ নির্বাচনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুভেচ্ছা জানায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটে শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের মানুষকে শুভেচ্ছা জানান।
ভারতীয় লেখক ও সম্পাদক সলিল ত্রিপাঠী বলেন, তারা শুভেচ্ছা জানালেও বিষয়টি বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে ছিল। কেননা তারা শেখ হাসিনার ওপর অতিরিক্ত আর বাংলাদেশের ওপর কম বিনিয়োগ করেছে। যেটি ভূ-কৌশলগত দিক দিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত কিছু ছিল না।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই থেকে দেশে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংসতায় রূপ নেয়। ১৬ জুলাই সংঘর্ষে নিহত হয় ছয়জন। ৫ আগস্ট পর্যন্ত এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ৪৩৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এর বাইরে গত ৬ আগস্ট পর্যন্ত আরও ১০৩ জনসহ দেশে মোট ৫৪২ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। ৭ আগস্টও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে যাওয়া আরও ২৬ জনের মরদেহ। যা নিয়ে আগস্টের ৭ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬৮।
এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।পরে তার পরিধি বাড়িয়ে ২১ জন করা হয়।