মোঃ খলিলুর রহমান, সাতক্ষীরা :: টানা বৃষ্টি ও বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরায় মৎস্য ও কৃষি খাতে প্রায় ৭শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রোপা আমন, আউশ ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির ক্ষেত সেই সাথে ভেসে গেছে ছয় হাজার মৎস্য ঘের ও দেড় হাজার পুকুর। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর পৃথকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গত সপ্তাহে চারদিন টানা ভারী বর্ষণে সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শ্মশানঘাটের পাশে বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে দুই উপজেলা ৩ ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ভেসে যায় এসব গ্রামের ফসলি ক্ষেত, পুকুর ও ঘের। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড বেতনা নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার করতে পারেনি। ফলে লোকলায় পানি ঢোকা এখনো অব্যাহত আছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিনেরপোতা, খেজুরডাঙ্গা, গোপীনাথপুর, তালতলা, আহসাননগর, হরিণখোলা, গোয়ালপোতা, গাছা, দক্ষিণ নগরঘাটা, হাজরাতলা, পালপাড়া, গাবতলা, দোলুয়া, নগরঘাটা, রথখোলা, কাপাসডাঙ্গা, নিমতলাসহ ৫০টি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় অনেকেই ছেড়েছেন এলাকা। এছাড়া বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার ঘুটেরডাঙ্গী, রামচন্দ্রপুর, লবণগোলা, পাথরঘাটা, দামারপোতা, জিয়ালা, ধুলিহর, বালুইগাছ, ফিংড়ি, ফয়জুল্লাহপুর, দরবেশতিয়া, কোমরপুর, তেঁতুলডাঙ্গী, মাছখোলা, শ্যালেসহ ৩০টি গ্রাম ও পৌর এলাকার অর্ধেক এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ২০-২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার পুকুর, ঘের, আমন ধান ও শাক-সবজির ক্ষেত। ঘের ব্যবসায়ী হোসেন আলী বলেন, আমার ১২০ বিঘা জমির তিনটি ঘের রয়েছে। সবকটায় চাষ করা হয়েছিল সাদামাছ। বৃষ্টিতে সবগুলো ঘের তলিয়ে রয়েছে। সবমিলিয়ে আমার প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষক মোঃ আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি ৮ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছি, এর মধ্যে ৬ বিঘা পানিতে তলিয়ে গেছে।৮ বিঘা জমিতে আমার লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টির পানি বেড়ে পুরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ধান গাছগুলো পানির নিচে পঁচে গেছে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে গাছগুলো সব মারা যাবে। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি আমন মৌসুমে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাঁচ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি আমন মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে পাঁছ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর বাজারমূল্য ৯ কোটির বেশি। এখনই জলবদ্ধতা নিরসন করতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টিজনিত কারণে জেলার সাতটি উপজেলায় বিশেষ করে শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদরে বেতনা নদীর একটা অংশ ভেঙে যাওয়ার কারণে তার আশপাশের ঘেরগুলো একেবারে পানির সাথে মিশে গেছে। মোট ৫ হাজার ২৩০ হেক্টর এরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মৎস্যচাষীদের প্রায় ৬শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অবকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে, সেটিও চার কোটি টাকার অধিক।