পঞ্চগড় প্রতিনিধি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার জুগিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও এলাকাবাসীর মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জটলা। স্কুলের সহকারী শিক্ষক সামসুন নেহারের যোগদান নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। ২০২৩ সালে প্রধান শিক্ষিকা আঞ্জুমান আরা ও সামসুন নেহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় সামসুন নেহারকে অন্যত্র সংযুক্তি করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। সংযুক্তি বাতিলের পরও তিনি নিজ কর্মস্থলে যোগদান করতে পারছেন না। প্রসঙ্গত, পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার জুগিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সামসুন নেহারে প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে কৃষ্ণনগর মালিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্তিতে শিক্ষকতা করছেন। গত ৫ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সামসুন নেহার সংযুক্তি বাতিল করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। উক্ত প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, আটোয়ারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস একটি অফিস আদেশ প্রেরণ করেন। আদেশে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকার স্মারক নং ৩৮.০১.০০০০.১৪৫.১৯.০৪০, তারিখ ০৫/০১/২০২৫ মোতাবেক সহকারী শিক্ষক সামসুন নেহার সংযুক্তি আদেশ বাতিল করা হলো এবং তাকে আটোয়ারী উপজেলার নিজ বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য অবমুক্ত করা হলো। এরপর ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, প্রধান শিক্ষিকার বরাবর যোগদান পত্র নিয়ে সামসুন নেহার বিদ্যালয়ে যোগদান করতে গেলে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের তোপের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে তাকে বিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এ বিষয়ে স্কুলের সাবেক সভাপতি অনিল চন্দ্র বর্মন বলেন, নৈতিকতা না থাকায় শাস্তিস্বরূপ তাকে ডেপুটেশনে দিয়েছিলো। টিও মাসুদ রানাকে ম্যানেজ করে ৯ তারিখে তার যোগদান করার কথা থাকলেও ২ তারিখে তিনি যোগদান করেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদ রানা বলেন, তিনি অনলাইনে বদলীর আবেদন করেছেন। ১০/১২ তারিখের মধ্যে সব প্রসেস হয়ে যাবে। ম্যানেজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে কেউ কখনো কিনতে পারেনি। কেউ এক কাপ চা’ও খাওয়াইতে পারেনি। আমি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করি। এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সমেশ চন্দ্র মজুমদার জানান, জুগিকাটা স্কুল নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে তিনি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত শেষে রিপোর্ট এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। এদিকে, এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা দাবি করেছেন, সামসুন নেহার যোগদান নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। তবে সামসুন নেহার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, তিনি শুধু ন্যায়সংগতভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে চান। এ অবস্থায় জুগিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।