মোঃ কামাল হোসেন খাঁন মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে গত বছরের ডিসেম্বরে শেষের দিকে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উদ্বোধন করা হয় ‘মুজিব ছায়া কুটির’। যার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন গাংনী পৌরসভার মেয়র আহমেদ আলী ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম সহ অনেকেই। তবে শুরুতেই নিজস্ব অর্থায়ন ও উদ্যেগে মুজিব ছায়া কুটির নির্মিত দাবি করেন উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা।
‘প্রখর সূর্যের খরতাপে ছায়া, বৃষ্টিতে আশ্রয় পাবে। দূর দূরান্ত থেকে আসা সেবা-প্রার্থীরা বসার জায়গা পাবে। বাইরে দাঁড়িয়ে, এলোমেলো ঘুরোঘুরি করে অপেক্ষমাণ সময়ে বেকায়দায় পড়তে হবে না। দলিল দাখিল করা মাত্রই একটি সিরিয়াল বা ক্রমিক নম্বর পড়বে এবং অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরি হবে। প্রত্যকেই তার ক্রম জেনে মুজিব কুটিরে বসে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে ক্রম নম্বর দেখতে পারবেন এবং সময় কাটাতে পারবেন।’ কুটির উদ্বোধনের সময় এমন নানান ধরনের কথা বলেছিলেন সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা। যদিও সেসমস্ত কাজ ও কথা এখন শুধু লোক দেখানোতে পরিনত হয়েছে।
উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত হয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নামানুসারে নির্মিত মুজিব কুটিরটি। উপরে টিনের ছাউনি থাকলেও নিচে বসার জায়গা নেই।
যেই কুটির জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল সেই কুটিরের এমন দশা দেখে সচেতন মহল মনে করেন সাব রেজিস্ট্রারের লোক দেখানো ছিলো এই মুজিব কুটির নির্মান।
এবিষয়ে গাংনী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, ‘আমার নিজস্ব অর্থায়নে মুজিব কুটির তৈরি করা হলেও কুটিরটিকে ঢেলে সাজানোর জন্য আমি পৌর সভা ও উপজেলা পরিষদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। দুই পক্ষ থেকেই আশ্বস্ত হওয়ার পর কমপক্ষে ১’শ বারের উপরে তাদের ফোন দিয়েছি কিন্তু আশানুরূপ কোন কিছু পায়নি। বাজেট হয়ে গেছে, করে দিবো এভাবেই ঘুরপাক খাওয়াচ্ছে।’
‘জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা শুধু আমার একার না’ এমন মন্তব্য করে সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা আরো বলেন, ‘বেঞ্চ, চেয়ার, পানির ব্যাবস্থা সহ বেশ কিছু কাজ এখনো আটকে রয়েছে। এগুলোর কাজ সম্পুর্ন করতে পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ আশ্বস্ত করেও আসেনা এবং সাহায্য করেনা। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা শুধু আমার একার না’।
বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, গাংনী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা ৩৭ তম বিসিএস থেকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন অধিদপ্তরে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে গাংনীতেই প্রথম যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর থেকে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ অত্র অঞ্চলের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে শুরু করে জাতীয় গণমাধ্যমে বারবার অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার সংবাদ প্রকাশিত হয়। তার বিরুদ্ধে জমি রেজিস্ট্রির শেষ ধাপে এসে টিপসই দেওয়ার আগে মসজিদের নামে বাধ্যতামূলক টাকা তুলে নিজ পকেটে ঢোকানোর অভিযোগ সহ ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় কয়েক হাজার দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তবুও আইনের ফাঁক ফোকর ব্যাবহার করে বহাল তবিয়তে রাজত্ব করে যাচ্ছেন গাংনী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম জানান, ‘মুজিব কুটির সম্পর্কে আমার জানা নেই, এটা সাব রেজিস্ট্রারের ব্যাক্তিগত উদ্যেগ। তিনি আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন আমি মেয়র মহোদয়ের কাছে অনেক প্রকল্প থাকে তাই একটা প্রকল্প দেওয়ার কথা বলেছি।’