এ এইচ কামরুল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কম খরচে রাসায়নিক সারের বদলে কেচো ও জৈবসার ব্যবহার করে বেশি বেশি ফষল উৎপাদনে সোনালী দিনের স্বপ্ন বুনছেন চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা।র্ ীঘনি যাবত ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে মাটির উরবরতা শক্তি দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। একারনে ফুল-ফল,সবজি ও ফষল উপাদনে কাঙ্খিত লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ক্রমেই চাষীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন তাদের চাষাবাদ কার্যক্রমে।
এই সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য এলাকার কৃষকসমাজ জেলার কৃষি বিভাগের শরনাপন্ন হয়েও কার্যকর কোন উপায় না পেয়ে অবশেষে স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত কেচো সার ও জৈব সারের দিকে ঝুকে পড়েন। এর ফলে আশাতীত ভাবে তাদের ফষলের গুনাগুন বৃদ্ধি সহ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই সাথে ফষল, ফুল-ফল ও সবজি সহ কৃষি পন্যের উৎপাদনে তারা আগামী দিনে রঙীন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে সরেজমিন খোজ নিতে যেয়ে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের পীতম্বপুর গ্রামের আবু বকরের ছেলে আশাবুল হক পেশায় একজন ভূমিহীন প্রান্তিক চাষী। তিনি পরের জমি বর্গা নিয়ে কোন রকমের কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। এতে পরিবার নিয়ে তার সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ায় এক পর্যায়ে তিনি তার ভিটাজমিতে ছোট পরিসরে ভেড়া ও ছাগল এবং হাস-মুরগীর খামার গড়ে তোলেন। এতসবের মধ্যেও এলাকার কৃষকদের ফষল উৎপাদন দিনদিন কমে যাওয়া এবং ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইয়ের আক্রমন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে প্রান্তিক চাষী আশাবুল এর থেকে বাঁচার পথ খুজতে াকেন। একপর্যায়ে গোবর সার নিজের ক্ষেতে প্রযোগ করেন। এতে করে তার উৎপাদিত কৃষিপন্যের ফলন কিছুটা বৃদ্ধি পেলে তিনি আশান্বিত হন। এর পর বিভিন্ন মহলের সাে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা ও পরামর্শ চালিয়ে যান। অবশেষে ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসে বেসরকারী সাহায্য সংস্থা আশার ামুড়হুা উপজেলার কলাবাড়ি শাখা থেকে ১০ হাজ্রা টাকা ঋন নিয়ে তিনি বাড়ির সাথে পতিত জমিতে ছোটকরে গড়ে তোলেন কেচো সার ও জৈব সারের কারখানা। তার আন্তরিক চেষ্ঠা এবং এলাকার চাষীদের সহযোগীতায় সেই দিনের সেই ছোট কারখানা আজ বিশাল পরিসরে গড়ে উঠেছে। তার এই ব্যাপ্তি দেখে আর্থিক সহযোগীতায় এগিয়ে এসেছে বেসরকারী সাহায্য সংস্থা আশার এমএসএমই চুয়াডাঙ্গা শাখা।
আশাবুলের লিজ নেয়া সাড়ে তিন বিঘা জমিতে গড়ে তোলা “ভার্মি কম্পোষ্ট ও জৈব সার প্রকল্প” দেখে তারা ২০২০ সালে এই প্রকল্পে ১০ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল ১২ লাখ টাকা ঋন প্রদান করেন। ৩৫ জন শ্রমীক দৈনিক ৪’শ টাকা মজুরীতে এখানে কাজ করছেন। এখান থেকে প্রতি কেজি কেচোসার ১০ টাকা এবং জৈব সার ৮ টাকা কেজি রে বিক্রি করা হয়ে থাকে। জেলার গন্ডি পেরিয়ে এখানকার উৎপাতি সার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি করেছে বলে জানা যায়। ইতিমধ্যে বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগন “ভার্মি কম্পোষ্ট ও জৈব সার প্রকল্প” পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ সহ কৃষিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে এর উদ্যোক্তা আশাবুল হককে সন্মাননা স্মারক প্রদান করেছেন। সেই সাথে জেলার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাষ প্রদান করা হয়েছে। এর আগে আলোচিত এই প্রকল্পটি পরিদর্শন করে গেছেন বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষনা ইউনিটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রজনন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড.আনিছুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খামার বাড়ির অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড.মেজবাহ উল আলম, কাজী ফার্ম লিমিটেডের ম্যানেজার মো.জামিরুল ইসলাম, ামুড়হুা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
“ভার্মি কম্পোষ্ট ও জৈব সার প্রকল্প”র উদ্যোক্তা মো.আশাবুল হক “প্রতিদিনের সংবাদ”কে বলেন, কেচো, গোবর ও কচুরিপানা পচিয়ে ভার্মি কম্পোষ্ট বা কেচো সার এবং গোবর, ছাই, চিটাগুড় টাইকোডার্মা এবং পোল্ট্রি বিষ্ঠার সংমিশ্রনে জৈবসার উপাদন করা হয়ে থাকে। যা সবজি, ফল ও ফষলের কোন রকমের ক্ষতি ছাড়াই অধীক কার্যকর।
পাশ্ববর্তী ইব্রাহীমপুর গ্রামের চাষী লুৎফর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান,এই কেচো সার ও জৈবসার ক্ষেতে প্রয়োগ করে তারা তাদের ভূট্টা ,পেপে,কলায় আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন, এ্কই রকমের উচ্ছাস প্রকাশ করে জুড়ানপুর গ্রামের বড় সবজিচাষী একরামুল হক বলেন, আমাদের ক্ষেতে ীর্ঘনি যাবত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারনে মাটির উর্বরতা শক্তি একদম কমে গিয়েছিল। আমরা চাষাবাদের ক্ষেত্রে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। বিভিন্ন ভাবে এই সারের কথা শুনে আমার পেয়ারা,মাল্টা এবং আলুর ক্ষেতে প্রয়াগ করে আমি আমার কাঙ্খিত ফলন পেয়ে খুশি।
বেসরকারী সাহায্য সংস্থা আশার এমএসএমই চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক তরিকুল ইসলাম জানান, আমরা আশাবুল হকের প্রকল্পটি দেখে খুশী হয়ে স্ব-উদ্যোগে তাকে ঋন দিয়েছি। যদি আরো কেউ এভাবে উদ্যোগ নিয়ে মানব কল্যানে এগিয়ে আসে তাহলে তাকেও বা সেই প্রতিষ্ঠানকেও আমরা সবধরনের আর্থিক সহায়তা দিতে সবসময় প্রস্তুত আছি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা জেলার কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে আশাবুলের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। ইতিমধ্যে কৃষি বিভাগের কুষ্টিয়া, যশোর ও আমাদের একটি টিম “ভার্মি কম্পোষ্ট ও জৈব সার প্রকল্প”টি দেখে এসেছে। আশা করবো এভাবেই চুয়াডাঙ্গায় কৃষকের কল্যানে আরো কৃষি উদ্যোক্তা তৈরী হবে এবং আমরাও তাদের সবধরনের সহযোগীতা করবো।