মোঃ পারভেজ খান মোংলা প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা। ১৯৫০ সালে এই বন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ধীরে ধীরে বন্দরটি লাভজনক বন্দরে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে জোট সরকার এই বন্দর কে “ডেথ সি পোর্ট” ঘোষণা করেছিল। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বন্দরে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বন্দর সচলতা শুরু হয়।
গর্বের পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের সবকটি বন্দর থেকে রাজধানী ঢাকার সবথেকে কাছের সমুদ্র বন্দর হবে এটি। পদ্মা সেতুর সুফলে অচিরেই মোংলা বন্দর বিশ্বের অন্যতম বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। পাল্টে যাবে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে কয়েক লাখ মানুষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে মোংলা বন্দরের কর্মব্যস্ততা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। গতি আসবে আমদানি-রপ্তানি কাজে। বন্দরের আশপাশে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা। এতে চাপ বাড়বে বন্দরের। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৮ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
এই এলাকার উন্নয়নের রূপকার সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব তালুকদার আব্দুল খালেক মোংলা বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল করতে খুলনা মোংলা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কথা ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর সাথে সাথে খুলনা এবং মোংলা বন্দরের সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে তাই দ্রুত সড়ক প্রসস্থ করে যানবাহন চলাচল সচল রাখতে হবে ।
বর্তমানে মোংলা বন্দরে ৬টি জেটি, ৩টি মুরিং বয়া, ২২টি অ্যাংকোরেজ এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ১১টি প্রতিষ্ঠানের জেটির মাধ্যমে মোট ৪২টি জাহাজ একসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ৪টি ট্রানজিট শেড, ২টি ওয়্যারহাউস, ৪টি কনটেইনার ইয়ার্ড, ২টি কার ইয়ার্ডের মাধ্যমে বার্ষিক ১ কোটি মেট্রিক টন কার্গো, ১ লাখ ব্যবহৃত কনটেইনার এবং ২০ হাজারটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা রয়েছে বন্দরের।
এদিকে পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা থেকে ঢাকায় একটি গাড়ি নিতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টা। ফলে সময় বাঁচার পাশাপাশি খরচও কমবে ব্যবসায়ীদের।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। ওই বছর গাড়ি এসেছিল মাত্র ২৫৫টি। তবে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) মে মাস পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে দেশে গাড়ি আমদানি করা হয়েছে ২০ হাজার ৯টি।
মোংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান বলেন, মোংলা বন্দর থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তার ৫২ শতাংশ আসে গাড়ি আমদানির কর থেকে। চলতি অর্থবছরে আমাদের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। তবে ১১ মাসে (মে -২০২২ পর্যন্ত) আমাদের রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দরে বাড়বে আমদানি-রপ্তানি, ফলে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।