মোঃ খলিলুর রহমান সাতক্ষীরা : বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিম সীমান্ত এলাকা ও সুন্দরবনের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা কৃষিতে সমৃদ্ধ জেলা সাতক্ষীরা। জেলায় উৎপাদিত পণ্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ও বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এছাড়াও দেশের দ্বিতীয় চিংড়ি উৎপাদনকারী হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে এই সাতক্ষীরা জেলা।
ভারত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ অন্য জেলায় পণ্য পরিবহনে সাতক্ষীরার ভোমরাস্থল বন্দর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আর এই সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
পদ্মা সেতু এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে সাতক্ষীরার ব্যবসায়-বানিজ্য সম্প্রসারন হবে। ভোমরা স্থলাবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
ভোমরা স্টেশন কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আমীর মামুন বলেন পদ্মা সেতু চালু হলে সব পণ্য আমদানি-রপ্তানির নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে।
সাতক্ষীরা চিংড়ী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা.আবুল কালাম বাবলা বলেন,পদ্মা সেতু উদ্ভোদনের পর দেশের হোয়াইট গোল্ড খ্যাত সাতক্ষীরার চিংড়ি শিল্পের রপ্তানিতে যোগ করবে নতুন মাত্রা। চিংড়ির গুনগত মান ঠিক রেখে বাজার সম্প্রসারণ করতে এই পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন এই পেশায় জড়িতরা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন,পদ্মা সেতু মাইল ফলক হয়েছে। মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ীরা খুবই উৎসায়ী হয়ে আছে। এখন মাছের গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাওয়া ফেরি ঘাটে আর আটকে থাকবে না। আগে এই ফেরিঘাটে গাড়ি আটকে থাকায় মাছের কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু এখন অল্প সময়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে দ্রুত সময়ে মাছ পৌঁছে যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এছাড়া রপ্তানিকৃত মাছ বিমানবন্দরে নিতেও সুবিধা হবে। ফলে বেড়ে যাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাও।
পর্যটন খাতেও দুয়ার খুলে যাবে সাতক্ষীরার। সুন্দরবন জেলা শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় খুব সহজেই পর্যটকরা আসতে পারবেন। এছাড়া পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা থেকে সহজেই পর্যকরা সাতক্ষীরায় এসে সুন্দরবন দেখে আবার ফিরেও যেতে পারবেন।
সাতক্ষীরা সুন্দরবন রেঞ্জ কর্মকর্তা এম এ হাসান বলেন,সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে অনেক অবকাঠামো গড়ে উঠবে। পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে সকালে সড়ক পথে পর্যটকরা এসে সুন্দরবনের সৌন্দয্য উপভোগ করতে পারবেন। এতে তাদের যেমন খরচ কমবে তেমন রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বাড়বে।
সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যাটনসহ শিল্প সমৃদ্ধ সাতক্ষীরা অর্থনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখর করে নিয়েছে। পদ্মা সেতু জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ইতোমধ্যে সাতক্ষীরায় একটি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে।