সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রামঃ কুড়িগ্রামে গত দুইদিন থেকে টানা বৃষ্টি না হওয়ায় এবং রোদ উঠার কারণে সব-কয়টি নদ-নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । ফলে টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে থাকা বন্যায় কুড়িগ্রামের বানভাসীদের পানিবন্দীর জীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
পানি হ্রাস পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও,তবে কমেনি মানুষের দুর্ভোগ । উঁচু এলাকার ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও কিছু চরাঞ্চলসহ নীচু এলাকার ঘর-বাড়িতে এখনও জমে আছে বন্যার পানি। এ অবস্থায় রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি,গো-খাদ্য সহ নানা সংকটের পাশাপাশি এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। অধিকাংশ শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। অনেকের হাতে ও পায়ে দেখা দিয়েছে ঘা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর মাধবরামপুরের বাসিন্দা মমিন আলী বলেন,’ বানের পানিতে হাত-পা সাদা হয়া(হয়ে) গেছে। রাত-দিন খালি চুলকায়।’
উলিপুরের মশালের চরের বাসিন্দা খোদেজা বেওয়া বলেন,’ গতকাল থাকি বন্যার পানি কমা শুরু হইছে। হামার কল(টিউবওয়েল) এল্যাও(এখনো) তলত পরি আছে (নিচে)। বানের পানি ছাকি খাই। সকাল থেকে নাতিটার পাতলা পায়খানা ।’
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বড়াই বাড়ি এলাকার মাহাবুব মিয়া বলেন,’বন্যার কারণে কাজকর্ম বন্ধ ঠিকমত বাজার করতে পারছি না। খাওয়া দাওয়ার খুব সমস্যায় পরছি। আবার পানিতে চলাফেরা করতে করতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে।’ সদরের ভোগডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এখন পর্যন্ত আমার ইউনিয়নে সরকারিভাবে এক হাজার পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ২২ টি পরিবারের বাড়িঘর ভেঙ্গে যাওয়ার তালিকা উপজেলা প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মো. মঞ্জুর-এ- মুর্শেদ জানান,
বন্যা পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম, ৯টি উপজেলায় একটি করে মনিটরিং টিম এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকেও ১৮টি ভেটেনারী মেডিকেল টিম গঠন এবং জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইনের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র,ধরলা,তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যা বন্যার পানি আরো কমে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ৯ উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৩শ ৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশু খাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা গো-খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।