মোঃ খলিলুর রহমান, সাতক্ষীরা ::
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন বেষ্টিত উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার শিক্ষার মান উন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণে অনন্য নজির স্থাপন করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ জেলার মানুষ আইলা, সিডর, আম্পান, বুলবুল, ইয়াস সহ নানান প্রকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করে টিকে থাকে। মৌলিক চাহিদার অন্যতম শিক্ষা ব্যবস্থা বিগত দিনের তুলনায় বর্তমান দৃষ্টান্ত হয়েছে। কেবলই শিক্ষা না ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আর প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় শিক্ষা ব্যবস্থার অবকাঠামোর বিল্ডিং এ জেলার হাজার হাজার মানুষের আশ্রয় প্রদান করে থাকে।তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, সাতক্ষীরার উদ্যোগে সরকারী-বে-সরকারী, আধা সরকারী, কারিগরি শাখার ৫শ ৬৭ টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় নতুন ভবন নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর এ কাজ বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হয়েছে ৪১ হাজার ৬শ ৫৩ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলায় এসমস্ত আধুনিক মানের সুযোগ সুবিধা বেষ্টিত বিল্ডিং নির্মাণে শিক্ষক শিক্ষার্থী সহ উপকূলীয় জেলার হাজার হাজার মানুষ সুবিধা ভোগ করছে। জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৯ টি প্রকল্পের মধ্যে (১) নির্বাচিত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের (৩২৩ স্কুল) আওতায় ৩টি কার্যাদেশ প্রাপ্ত, ২টি চলমান, ১টি সমাপ্ত। কাজের গড় অগ্রগতি ৯১%। টেন্ডার মূল্য ১ হাজার ৩শ ৬৭ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা। (২) শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলায় ২টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ (১০০ টিএসসি) নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কাজের গড় অগ্রগতি ১০০%। টেন্ডার মূল্য ৩ হাজার ৯৪ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা। (৩) নির্বাচিত বেসরকারি (৩২৫০) স্কুল প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ সাতক্ষীরা জেলায় ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২টি কার্যাদেশ প্রাপ্ত, ৪১টি সমাপ্ত, ০১টির কাজ চলমান। কাজের গড় অগ্রগতি ৯৯%। টেন্ডার মূল্য ৪ হাজার ৯শ ২০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। (৪) নির্বাচিত বেসরকারি ৩ হাজার স্কুল প্রকল্পের আওতায় চারতলা ভিত বিশিষ্ট চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ সাতক্ষীরা জেলায় ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০টি কার্যাদেশ প্রাপ্ত, ১১টির কাজ চলমান, ১ টির কার্যাদেশ বাতিল করে রিটেন্ডার প্রক্রিয়াধীন, ২৮টি সমাপ্ত। কাজের গড় অগ্রগতি ৯৫%। টেন্ডার মূল্য ১২ হাজার ১শ ৭৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। (৫) স াতক্ষীরা জেলায় ১ হাজার ৮শ মাদ্রাসা প্রকল্পের আওতায় ২৪টি প্রতিষ্ঠানের ১৫টির কাজ চলিতেছে। ১টির কার্যাদেশ বাতিল করে রিটেন্ডার করা হয়েছে, ০৮টি সমাপ্ত। কাজের গড় অগ্রগতি ৮২%। টেন্ডার মূল্য ৮ হাজার ৭শ ৭৪ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। (৬) নির্বাচিত সরকারি কলেজ সমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ শীর্ষক (২০০ কলেজ) প্রকল্পের ৬টির মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ হয়েছে, ০২টি সমাপ্ত, ০৪টি চলমান। কাজের গড় অগ্রগতি ৮০%। টেন্ডার মূল্য ৩ হাজার ৩৮ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। (৭) ০১টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের (৬৪ টিএসসি) নির্মাণ কাজ চলিতেছে। কাজের গড় অগ্রগতি ৮৩%। টেন্ডার মূল্য ৭শ ৩১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা। (৮) রাজস্ব বাজেট (কোড নং- ৭০১৬) এর আওতায় নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের একাডেমিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা জেলার মাউশি-৭১টি ও টিএমইডি ১৬টি মোট স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ-৮৭ টি এর মধ্যে সমাপ্ত ৩৩টি। কাজের গড় অগ্রগতি ৬১%। টেন্ডার মূল্য ৭ হাজার ৫৫ কোটি ২ লক্ষ টাকা। (৯) নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ (আসবাবপত্র) শীর্ষক প্রকল্প ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০টি সমাপ্ত হয়েছে। ১টি কাজ চলমান। ১টি কাজের আর্থিক অনুমোদন হয়নি। মোট টেন্ডার মূল্য ৪শ ৯৫ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। অত্র ৯টি প্রকল্পের মধ্যে মোট ২শ ৪৭টি স্কিম, ১শ ৫৫টি সমাপ্ত হয়েছে। এবিষয়ে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী এলাকার সমাদ্দার কার্তিক চন্দ্র, গাবুরার আরিজুল ইসলাম, আশাশুনির শফিকুল ইসলাম সহ একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, কেবলই শিক্ষার মান উন্নয়নে নয় সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগে এসমস্ত শিক্ষা অবকাঠামো বিল্ডিং তাদেরকে মায়ের মতো আগলে রেখেছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ক্লাসরুম সংকট সহ নানামুখী প্রতিকূলতা প্রতিহত করছে সরকারের শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের এসমস্ত অবকাঠামোর বিল্ডিং। সাতক্ষীরা জেলার অধিবাসীরা নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিগত দিনে জানমাল দিয়ে নানা ধরণের ক্ষতির শিকার হতো। শিক্ষাখাতের বৃহৎ এ বাজেটে সাতক্ষীরার আধুনিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং নির্মাণে একদিকে স্বনির্ভর জাতি তৈরী হচ্ছে। অপরদিকে প্রাকৃতিক দূর্যোগে বুক চিতিয়ে মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রিংকন বিশ্বাস জানিয়েছেন, সরকারের বাজেটকৃত অর্থ এ অঞ্চলের মানুষের কল্যানের জন্য স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কার্যাদেশ শেষ করতে দূঢ় প্রত্যয়ী। কেননা একটি অবকাঠামো মানে সাতক্ষীরার একেকটি অঞ্চলের ভরসার আশ্রয়কেন্দ্র।