স্বপন কুমার রায়, খুলনা ক্যুরো প্রধান: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আজ মাঠে নামছেন সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা। তারা নির্বাচনি মাঠে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। ভোট গ্রহণের দুই দিন পর অর্থাৎ আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিন তারা মাঠে থাকবেন। তবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ৩ জানুয়ারি থেকে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। এদিকে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার ৯০৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে ইসি।
ঐ ম্যাজিস্ট্রেটরা ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনি দায়িত্বে থাকবেন। ইসি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ১৬২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। এর মধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালন দেখভালে রয়েছেন ৭৫৪ জন। আজ থেকে বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব,, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ন মোবাইল ও স্ট্রইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামছেন। তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশে কাজ করবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও খুলনার ৪৩টি উপকূলীয় ইউনিয়নে কোস্টগার্ড মোতায়েন হচ্ছে। আগের নির্বাচনের মতো এবারও বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নামানো হচ্ছে। তারা প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও থানার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান করবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য অভিযান পরিচালনা করবেন সেনা সদস্যরা। রিটার্নিং বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী সেনাসদস্যরা ভোটকেন্দ্রের ভেতর বা ভোটগণনা কক্ষে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে নৌবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। আগের সব নির্বাচনের চেয়ে এবার দেশীয় পর্যবেক্ষক কম: এদিকে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ২০ হাজার ৭৭৩ জন দেশীয় পর্যবেক্ষক অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির নিবন্ধিত ৮৪টি পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ পর্যবেক্ষকেরা আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। গতকাল নির্বাচন কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শরিফুল আলম পর্যবেক্ষকদের এ সংখ্যা জানান। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৯৬টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে। ইসি সূত্রে জানিয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে, এবারই সবচেয়ে কমসংখ্যক দেশীয় পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে যাচ্ছেন। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র, ভোটকক্ষ ও ভোটার বেড়েছে। কিন্তু পর্যবেক্ষকসংখ্যা কমেছে। বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় পর্যবেক্ষকসংখ্যা কমতে পারে বলে মনে করছে ঐ সূত্র। ইসি জানিয়েছে, এবার নির্বাচনে কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষণসংস্থার ৫১৭ জন ও স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণসংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবে। সব মিলিয়ে পর্যবেক্ষকসংখ্যা ২০ হাজার ৭৭৩ জন। আসনভিত্তিক পর্যবেক্ষকের তালিকা সব রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র আনুমানিক ৪২ হাজার ২৫০টি আর ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ। এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ৩৪ হাজার ৬৭১ জন দেশীয় পর্যবেক্ষক আবেদন করেন। ঐ নির্বাচনে ৮১টি পর্যবেক্ষকসংস্থার ২৫ হাজার ৯২০ জনকে অনুমতি দেয় তত্কালীন নির্বাচন কমিশন। ২০১৪ সালে ১৪৭টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়। বাকি ১৫৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হন। ঐ ১৪৭টি আসনে ৮ হাজার ৯০০ জন পর্যবেক্ষক ছিলেন। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার এবং ২০০১ সালে প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার পর্যবেক্ষক ছিলেন।