–
স্বপন কুমার রায় খুলনা ব্যুরো প্রধান
গতবছর (২০২০-২১) মাড়াই মৌসুমে মোট=১৫ টি মিলের মধ্যে ৬ টি মিলের মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে। উক্ত মিলের আখ ৯ টি মিলে মাড়াই কার্যক্রম চালু রেখে লোকসানের পরিমান বৃদ্ধি করা হয়। যেমন – বন্ধকৃত ৬টি মিলের মেন্টেনেন্স ব্যয় করা হয়েছিল,উক্ত মিলের আখ পাশ্ববর্তী মিলে সরবরাহ করতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়,অ-ব্যবস্হাপনার কারনে অখগুলি শুকিয়ে যায় ফলে চিনির রিকভারি কমে যায়।মিলগুলো ১১/১২/২০ ইং তারিখে দেরিতে খোলার কারণে আখ প্রাপ্তি কম হয়।এমনকি কোন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে চাষিদের আখ রোপনের জন্য কোন রকম পরামর্শ দেওয়া হয় নাই।আখ চাষিদের মাঝে সার,বীজ, কীটনাশক দেওয়া হয় নাই।তাই আখচাষিরা গুজবে দিশেহারা ও ভিতস্ত হয়ে আখ চাষ হতে বিরত থেকেছে।তাই বাস্তবতার আলোকে আখ চাষ কম হয়েছে।মিলগুলোর (২০২১-২২) মাড়াই মৌসুম দেরিতে ১০/১২/২০২১ইং তারিখ হতে পর্যায়ক্রমে খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।প্রতিবাদ স্বরূপ মিল কর্তৃপক্ষ,শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং আখচাষি নেতৃবৃন্দের পরামর্শে পরবর্তীতে ২৬/১১/২০২১ ইং তারিখ হইতে পর্যায়ক্রমে মিলগুলো চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাও অনেক দেরিতে।মিল চালানো উচিত ছিল নভেম্বরের মাঝামাঝি।চিনির রিকভারির অজুহাত দেখিয়ে দেরিতে মিল চালানো কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে আমি মনে করি।তাতে চিনির রিকভারি কিছুটা কম হলেও মোলাসেচ, পেসমাঠ,আখের ছোবরা বিক্রি করে সেই লোকসান পোষানো সম্ভব হতো।ফলে লাভ হইতো চাষিরা আখচাষে উদ্ভুদ্ধ হতো এবং নবেসুমি খামারের জমিতে মসুর আবাদ করে প্রায় এক কোটি টাকা লাভ করতে পারতো।পাবনা সুগার মিলের যে আখগুলো আছে সেই আখ নবেসুমি নেওয়ার সঠিক সিদ্ধান্ত দিতেও কেন এতো দেরি হচ্ছে?সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করার ফলে উক্ত আখচাষিরা আজ দিশেহারা হয়ে তারা পরবর্তীতে আখ রোপনে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।যখন মিলগুলোতে চিনি শেষের দিকে তখন বিদেশি চিনি সিন্ডিকেটদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য চিনির মূল্য বৃদ্ধি করা হলো,তাও মিলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যেখানে পূর্বে চিনির মূল্য ছিল প্রতি কেজি লুজ চিনি ৬৩ টাকা এবং প্রতি কেজি পেকেট চিনি ৬৮ টাকা।অথচ বর্তমানে প্রতি কেজি লুজ চিনি ৭৪ টাকা এবং প্রতি কেজি পেকেট চিনির মূল্য ধার্য করা হয়েছে ৭৫ টাকা অর্থাৎ প্রতি কেজিতে মিলের লোকসান হচ্ছে ৪ টাকা।কারণ উক্ত পেকেট করতে বি এস টি আই পেকেট, পেকেট মজুরী,পরিবহন এবং উক্ত পেকেট ফেরত ডেমারেজ বাবদ ৫ টাকা বেশি খরচ হয়,এটা যেন ” মরার উপর খাড়ার ঘাঁ “।অথচ ডিলারদের/বিক্রয় প্রতিনিধিদের জন্য প্রতি কেজি পেকেট চিনির মূল্য ধার্য করে দেওয়া হয়েছে ৮৫ টাকা কিন্তু লুজ চিনির মূল্য ধার্য করে দেওয়া হয়নি।এখানে প্রতীয়মান হয় যে শুভংকরের ফাঁকির ফাঁদে ফেলা হয়েছে চিনিশিল্পকে।দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একমাত্র ভারিশিল্প এই “চিনিশিল্পের” বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে সরকার,শিল্পমন্ত্রী,শিল্প সচিব,সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকগন,সদর দপ্তরের কর্মকর্তাগন,মিলের কর্মকর্তাগন,শ্রমিক নেতৃবৃন্দ,শ্রমিক-কর্মচারীগন সহ আখচাষিদের আন্তরিকতায় লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করা যেতে পারে।আমাদের সকলকে স্বচ্ছতার সহিত নিজ-নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে,স্বচ্ছতা ও দিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।অতী পুরাতন মিল আধুনিকায়ন করে চিনির রিকভারি বৃদ্ধি করা যেতে পারে।প্রয়োজনে মিল ব্যবস্হাপনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর অফিসার কর্তৃক পরিচালিত করা যেতে পারে।উচ্চ ফলনশীল এবং বেশি রিকভারি যুক্ত ভাল জাতের আখের জাতের উদ্ভাবন করতে হবে।চাষিদের মাঝে সার,কীটনাশক ও ভর্তুকির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।সর্বপরি আখচাষিদের আখের মূল্য বৃদ্ধি,সময়মতো আখের মূল্য পরিশোধ সহ চাষিদের সাথে ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে আখচাষে উৎসাহিত করতে হবে।তবেই পর্যাপ্ত কাঁচামাল আখ পেলে সুগার মিলগুলো পূণরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
সরকারের কাছে ক্ষুধার্ত শ্রমিক ও আখচাষি,আজ
একটা কথা বলছে ——————-
” আপনার চিনিশিল্প বেঁচে থাকলে
আমাদের বাচ্চা খেতে পারবে ” ।
সর্ম্পকিত খবর সমূহ.
November 23, 2024