হেলাল হোসেন কবির: ঐতিহাসিক কল্পকাহিনীকেও হার মানায় ফারজানা। একের পর এক ছেলে পটানো এবং মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছটকে যাওয়া তার কাজ। এর আগে তার নামে বিভিন্ন ছেলেদেরকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ স্বর্ণ, মোবাইল ও নগদ টাকা চুরির অভিযোগ রয়েছে তার নামে।
সর্বশেষ লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল মজিদ মণ্ডলের ছেলেকে কেন্দ্র করে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। ফারজানা ও মাহিকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার পেছনে রয়েছে এক অশুভ রাজনীতির ছোঁয়া।
জানা যায়, মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের সাতপাটকি গ্রামের এসএম জাহিদ হাসানের মেয়ে ফারজানা বেগম (২১) বিভিন্ন সময়ে নানা অনিয়মের কারণে
সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় এসেছেন। চলমান একটি ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মানুষের মেসেঞ্জারে তার ছবি দেখা যাচ্ছে। ভাসছে একে অপরের ছবি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আনুমানিক ৫বছর আগে একই এলাকার ইসলামের ছেলের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে ধরা পড়ে সালিশের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা নেয় তার পরিবার। মিমাংসার এক বছর পর গোকুন্ডা ইউনিয়নের গুড়িয়াদহ গ্রামের বুলু পাটোয়ারীর ছেলে ফেরদৌসের সঙ্গে একই কায়দায় আটক হলে সেখানেও স্থানীয়ভাবে মোটা অংকের টাকা নেন তার পরিবার।
সেই মেয়েটির ৩বছর আগে রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার অনহরাম গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে মামুন মিয়া (২৭) এর সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ে হওয়ার পরেও তার চরিত্র বদলাইনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নতুন নতুন ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন ছেলেকে তারগেট করতে থাকে। ভিন্ন কায়দায় বিভিন্ন জনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যার কারণে তার স্বামী একাধিকবার শাসন করেছিলেন কিন্তু তারপরেও কোনভাবেই ফারজানাকে সামলানো যায়নি।
শুধু তাই নয়, কয়েক বছর আগে ফারজানা স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসলে তার বাবার চাচা নানু মেম্বারের স্বর্ণ চুরি করলে থানায় অভিযোগ হলে পুলিশের তদন্তে চুরির বিষয়টি প্রকাশ পায়। একই এলাকার গফুরের ছেলে লাজুর মোবাইল চুরি, চাচা বেলালের টাকা চুরি, তার ফুফা মহাতাবের স্বর্ণ চুরিসহ আরও অনেকগুলো চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে এগুলো পারিবারিকভাবে মিমাংসা হয়।
তার ১বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার বিভিন্ন ছেলেদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কারনে তার স্বামী মামুন তাকে চলতি বছরের ২২ ডিসেম্বর তালাক দেন। আরও জানা যায়, তার স্বামী
বাড়িতে থাকাকালীন তার স্বামীর মোটর সাইকেলটি পুড়িয়ে দেয়, তার স্বামীর পোষা গরুকে বিষ খেয়ে মেরে ফেলেন।
তালাক হবার পরেরদিন ২৩ ডিসেম্বর বাবার বাড়িতে এসে এলাকার পূর্ব পরিচিত মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ মন্ডল এর ছেলে মাহি মন্ডল (১৬) কে সন্ধ্যা অনুমান ৭ঘটিকায় সু-কৌশলে তার বাবার বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে তাকে আটকে রেখে তার পরিবারের নিকট এক কোটি টাকা দাবি করে।
রাতে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ গিয়ে মাহি ও ফারজানাকে থানায় নিয়ে যায় ।পরে ফারজানা বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় ধর্ষণের চেষ্টার একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মাহিকে পুলিশ আটক দেখায়। এদিকে ২৬ ডিসেম্বর লালমনিহাট জেলা ও দায়রা জজ এর আদালত মাহিকে জামিন দেন।
সেই রাতে ঘটনাস্থলে থাকা নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনেকেই বলেন, মেয়েটি যখন মাহিকে নিয়ে আটক করার অভিনয় করতে থাকে সেখানে জাতীয় পার্টির নেতা আশাদুল আশিকিন রতন এসে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে নিয়ে যায় এবং তার পরিবারের নিকট এক কোটি টাকা দিলে মিমাংসা করা হবে মর্মে প্রস্তাব দেয়।
মাহির বাবা মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ মন্ডল বলেন, “আমার সঙ্গে একটি পক্ষ নির্বাচনে হেরে গিয়ে সুকৌশলে আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এ রকম একটি সাজানো নাটক করে এবং আমার কাছে মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাব পাঠায় আমি রাজি হয়নি। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”
ফারজানা এজাহারের উল্লেখিত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করলে সেই ফোনটি রিসিভ করেন তার চাচা রুবেল সরকার। তিনি বলেন, “এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার আসামীকে আদালত জামিন দিলে আমাদের কিছু বলার নেই আর আমার ভাতিজিকে নিয়ে ইতিপূর্বে ঘটনাগুলো সম্পর্কে যা রটানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ গুজব ও মিথ্যা।”