আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কৃষকেরা চাহিদা অনুযায়ী সরকারকে ধান দিচ্ছেন না। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর আমন মৌসুমে ২৭ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ২৩৬ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে চাল সংগ্রহ শেষ হলেও চাহিদা মত আজ বুধবার পর্যন্ত কোনো ধান কিনতে পারেনি সরকারি খাদ্যগুদামগুলো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ৭ নভেম্বর ধান ও চাল সংগ্রহ শুরুর আগে প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়। ধান সংগ্রহ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধানের মূল্য ২৭ এবং চাল ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান বাজার দরের চেয়ে সরকারি দাম প্রতি কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেশি পাওয়া গেলেও কৃষকেরা গুদামে ধান দিচ্ছেন না। তাঁরা মানের বিষয়ে কড়াকড়ি ও টাকা পাওয়া নিয়ে ঘোরাঘুরিসহ বিভিন্ন ঝামেলার কারণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এযাবৎ উপজেলার নির্বাচিত ৪১২ জন কৃষকের মধ্যে এ যাবৎ মাত্র ১১জন কৃষক মাত্র ৩২ মেট্রিকটন ধান রাণীশংকৈলের সরকারি দুই খাদ্যগুদামে বিক্রি করেছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্যগুদামে দেওয়া ধান একটু কম শুকানো হলে নিতে চায় না। তখন ধান নিয়ে আবার ফেরত আসতে হয়। আবার পরিবহন খরচ, গুদামের শ্রমিকদের চাঁদা, এসব বাড়তি খরচ তো আছেই। আর বাজারের পাইকারদের কাছে ধান বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। কিছু কিছু পাইকার ধান মাড়াইয়ের পর বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যান। সার্বিকভাবে বর্তমানে সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে বিক্রি করলে ভালো দাম মিলছে। গুদামে ধান দিলেও টাকা তুলতে সময় লাগে। এ জন্য সংসারের কাজ ছেড়ে অফিসে ঘোরার সময় নেই তাঁদের। ফড়িয়ারা বাড়িতে এসে ধান নিয়ে যাচ্ছে তাদের । একই ঝামেলার কথা জানিয়ে ধর্মগড় ইউনিয়নের মন্জুর হোসেন বলেন, ‘খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলে এক টন ধান গাড়ি থেকে নামার জন্যে খাদ্যগুদামের লেবাররাই ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা নেয়। ফের গাড়ি ভাড়া যায় ৪০০ টাকা। তার ওপর আরও ঝামেলা অনেক। যদি কোনো দিন ধান ৫০০ টাকা মণ উঠে তখন ভেবে দেখবো, খাদ্যগুদামে ধান দেওয়া যায় কি না।’ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমন ধান সংগ্রহের জন্য সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। এতে ৬ হাজার ৩১ জন কৃষকের আবেদন পড়ে। গত বছরের ৭ নভেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইন্দ্রজিত সাহার সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানে আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে লটারির মাধ্যমে ৪১২ জন কৃষককে নির্বাচন করা হয়। জানা গেছে, উপজেলায় দুটি খাদ্যগুদাম রয়েছে। এর মধ্যে পৌরশহরের রাজবাড়ী খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৪ জন কৃষকের কাছে ৭০২ মেট্রিক টন ধান। নেকমরদ খাদ্যগুদামে ১৭৮ জন কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহের কথা ছিল ৫৩৪ মেট্রিক টন। কিন্তু দুটি খাদ্যগুদামে এ পর্যন্ত মাত্র ৩২ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘বাজারে এবার ধানের দাম ভালো। কৃষকেরা বাজারেই ২ হাজার ৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা বস্তা দরে ধান বিক্রি করছেন। কৃষকদের বাড়ি থেকে নিজস্ব পরিবহনে ফড়িয়ারা ধান কিনে নিচ্ছে। এতে কৃষকেরা খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।’ রাণীশংকৈল রাজবাড়ী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা এবার ধান দেয়নি। এই গুদামে মাত্র ১০ জন কৃষক ধান দিয়েছেন। মাত্র ৩০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে।’ নেকমরদ সরকারি খাদ্যগুদামের উপপরিদর্শক বাবুলুর রহমান বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও ধান পাওয়া যায়নি। একজন কৃষক মাত্র দুই মেট্রিক টন ধান দিয়েছেন।’ এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জিয়াউল হক শাহ বলেন, ‘আমরা তো খাদ্যগুদামে ধান দিতে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদের মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি। এখনো সময় আছে, দেবে হয়তো।’