মমিনুল হক রাকিবঃ
বন্ধুদের মোটরবাইক চালানোর সময় ক্যামেরা নিয়ে ভিডিও করা দেখে মনে মনে নিজেও একদিন মোটরবাইক নিয়ে ভ্লগিং করার স্বপ্ন দেখা ছেলেটাই আজ মটোভ্লগিং এ দেশবরেণ্য। ইতিমধ্যে তিনি অর্জন করেছেন এক লক্ষ সাবস্ক্রাইবার এর স্বীকৃতি স্বরুপ ইউটিউব প্রদত্ত সিলভার প্লে বাটন। দেশের জনপ্রিয় এই মটোভ্লগার এর নাম আশরাফ উদ্দিন রাহাত এবং তার চ্যানেল এর নাম “দ্যা আউটসাইডার”।
আশরাফ উদ্দিন রাহাত বর্তমানে বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করছেন। বাংলাদেশের বর্তমান জনপ্রিয় মটোভ্লগারদের মধ্যে তিনি অন্যতম। রাহাত এর ব্যবহৃত মোটরবাইকটিও তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় যার নাম “মেগাস”। শূন্য থেকে এক লক্ষ সাবস্ক্রাইবার এর পথটা কেমন ছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন,” এই পথটা অনেক বেশি কষ্টের ছিলো। শুরুতে ভিডিওতে তেমন ভিউ হতো না, খুব বেশি মানুষ দেখতো না। নিজের কাছের বন্ধুদের আমার ভিডিও দেখতে বলতাম কিন্তু তাতে খুব বেশি একটা লাভ হচ্ছিলো না। তখন আমি বুঝতে পারি যে কেউ যদি আগ্রহ নিয়ে আমার ভিডিও না দেখে তাহলে আমার ভিউ হবে না খুব স্বাভাবিকভাবেই। তারপর থেকে আমি আর কখনো কাউকে আমার ভিডিও দেখতে বলি নাই। আমি শুধু কাজ করে গিয়েছি এবং মানুষের ভালোবাসা আদায় করে নিয়েছি। মানুষের ভালোবাসাতেই আজ “দ্যা আউটসাইডার” এক লক্ষাধিক সদস্যের একটি পরিবার”।
সিলভার প্লে বাটন পাওয়ার অনভূতিটা রাহাতের কাছে অবিশ্বাস্য ছিলো। এব্যাপারে তিনি বলেন,”আমি কখনোই ভাবি নাই আমি সিলভার প্লে বাটন পাবো। যখন সিলভার প্লে বাটনটি হাতে পাই আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এতোদিনের শ্রম,ত্যাগ এবং লক্ষাধিক মানুষের ভালোবাসার স্বীকৃতি এই সিলভার প্লে বাটন”।
রাহাত বর্তমানে জনপ্রিয় দুইটি ব্র্যান্ড গিয়ার-এক্স এবং পির্যালি এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর
হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড এর স্পন্সরশীপ পেয়েছেন তিনি।
রাহাত এর পরিবার ছিলো খুবই নিয়ন্ত্রিত একটি পরিবার। একা কোথাও যেতে দেয়া হতো না তাই ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও কখনো ঘুরে বেড়াতে পারেন নাই। ঠিক তখন থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখেছেন একদিন পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর কিন্তু পৃথিবী ঘুরে দেখার আগে রাহাত নিজের দেশটাকে সম্পূর্ণভাবে ঘুরে দেখতে চাইতেন তাই তো বেড়িয়ে পড়েছিলেন মোটরবাইকে করে ৬৪ জেলা ঘুরে বেড়ানোর উদ্দ্যেশ্যে। ৬৪ জেলা ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “৬৪ জেলা ভ্রমণ এর অনুভূতি অনেক বেশি দারুণ ছিলো। প্রতিদিন নতুন শহর, নতুন মানুষ, নতুন খাবার এর অভিজ্ঞতা আমি দারুণ ভাবে উপভোগ করেছি। আমাদের এই দেশটা যে কতো সুন্দর তা আসলে ভ্রমণ না করলে বুঝার কোনো উপায় নেই। ৬৪ জেলা ভ্রমণ আমরা ৩০ দিনে সম্পন্ন করি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমরা যদি আরো বেশি সময় নিয়ে ভ্রমণ করতে পারতাম তাহলে হয়তো আর বেশি উপভোগ করতে পারতাম আর তাছাড়া আমার যারা ফ্যান কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী আছে বিভিন্ন জেলায় তারা অনেকেই দেখা করতে চেয়েছে তাদের সবার সাথে দেখা করে আরো দারুণ সময় কাটাতে পারতাম।দেশের গন্ডী পেড়িয়েও মোটরবাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াতে চান রাহাত। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে তার ভারতের লাদাখ ভ্রমণের পরিকল্পনা স্থগিত করতে হয়। পৃথিবী সুস্থ হলেই আবারো বেড়িয়ে পড়তে চান পৃথিবীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে”।
বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপটে মটোভ্লগিং এ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা অনেক চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন এই জনপ্রিয় মটোভ্লগার। তবে দেশের জনপ্রিয় বেশ কয়েকজন মটোভ্লগার একসাথে হয়ে কাজ করছেন মটোভ্লগিং এর যথার্থতা সবার সামনে তুলে ধরতে। মোটরবাইক এবং মোটরবাইক সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ধীরে ধীরে নিজেদের ব্যবসা প্রসারে মটোভ্লগাদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন বলে মনে করেন রাহাত। নতুন যারা মটোভ্লগ করতে ইচ্ছুক তাদের মান সম্পন্ন কন্টেন্ট নির্মাণ এবং স্কিল ডেভলপমেন্ট এর দিকে জোর দিতে বলেছেন তিনি।