মোঃ সাজ উদ্দিন সাজু, সিলেট জেলা প্রতিনিধি:
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার একমাত্র বন্ধ শ্রীপুর পাথর কোয়ারী হতে পাথর উত্তোলন করছে প্রভাবশালী চক্র। দেখার কেউ নেই ? সীমান্তের জিরো লাইন হতে পাথর উত্তোলনের কারণে যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। স্থানীয়দের অভিযোগ সীমান্ত বাহিনী বিজিবি’র বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলা বন্ধ রাখা শ্রীপুর পাথর কোয়ারী ঘুরে দেখা যায়, কয়েকশত শ্রমিক দিনের আলোতে ১২৮০ নং আর্ন্তজাতিক পিলার এলাকা হতে বড় বড় গর্ত খনন করে দেদারছে পাথর উত্তোলন করে রাংপানি (শ্রীপুর) নদীর ধারে জড়ো করছে। পরবর্তীতে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নৌকা যোগে উত্তোলিত পাথর নিয়ে যাওয়া হয় আসামপাড়া, ০৪ নং বাংলাবাজার, আদর্শগ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানে।
পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের সাথে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা প্রতিবেদককে জানান, আমাদেরকে মহাজনেরা পাথর উত্তোলন করে নদীর পাশে জড়ো করতে বলেন। আমরা ০১ নৌকা পাথর উত্তোলন করলে ০৮ শত টাকা মজুরী পাই। পেটের দায়ে শ্রীপুর পাথর কোয়ারীতে পাথর উত্তোলন করি। সীমান্ত বাহিনী বিজিবি বাঁধা বিপত্তি করে কিনা প্রশ্ন করা হলে শ্রমিকরা বলেন, মহাজনের সাথে বিজিবির লাইন রয়েছে। সেজন্য বিজিবি আমাদের কিছু বলে না। কত টাকা লাইন দেওয়া হয় জানতে চাইলে তারা বলেন, সেটা আমাদের জানা নেই মহাজনেরা দিয়ে আসছেন। সীমান্তের জিরো লাইনে পাথর উত্তোলন করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সমস্যা করে কিনা প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন বিএসএফ বাঁধা দেয়, বিএসএফ দেখলে আমরা পালিয়ে যাই, এভাবে চুর পুলিশ খেলার মধ্যে দিয়ে আমরা পাথর উত্তোলন করি।
কথা হয় একজন পাথর ব্যবসায়ীর সাথে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিগত ০২ মাস ধরে বন্ধ থাকা শ্রীপুর পাথর কোয়ারী হতে প্রভাবশালী একটি পাথর খেকু চক্র সীমান্তের ১২৮০ নং পিলার এলাকা হতে শ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তোলন করে আসছে। সীমান্তে পাথর উত্তোলনের জন্য বিএসএফ বাঁধা দেয়। তারপরও পাথর উত্তোলন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে যে কোন মুহূর্তে শ্রীপুর পাথর কোয়ারীতে বিএসএফ গুলি বর্ষণ করতে পারে।
শ্রীপুর পাথর কোয়ারীতে সাংবাদিকদের অবস্থান নিয়েছেন শুনে দ্রুত শ্রীপুর বিজিবি ক্যাম্পের ০২ জন সদস্য ঝড়ের গতিতে কোয়ারীতে পৌঁছেন। শ্রমিকদের কোনো কিছু না বলে তারা প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান। সাংবাদিক পরিচয় জানার পর পর তারা শ্রমিকদের নানা অসুবিধার কথা বলে যান। একপর্যায় শ্রীপুর ক্যাম্পে চায়ের আমন্ত্রণ জানান। প্রতিবেদক সহ অন্যান্য সংবাদকর্মীরা জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। কিন্তু বিজিবি একজন পাথর উত্তোলনকারীদের ঘটনাস্থল হতে তাড়িয়ে দেয়নি।
জৈন্তাপুর ইউপির সাবেক ইউপি সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের ছোট ভাই মোঃ ইসমাইল আলী বলেন, আমি নিজেও শ্রীপুর পাথর কোয়ারীতে ব্যবসা বানিজ্য করতাম। কিন্তু শ্রীপুর কোয়ারীতে পাথর উত্তোলনের অযোগ্য হওয়ায় সরকার ইজারা বাতিল করে। তারপর হতে কোয়ারী বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি একটি চক্র সীমান্তে জিরো লাইন অতিক্রম করে পাথর উত্তোলন করছে সরেজমিনে না আসলে বুঝার উপায় ছিল না। বিজিবির এমন ভূমিকা আমাকে হতাশ করেছে। জিরো লাইন অতিক্রম করা কোনোভাবে কাম্য নয়।
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, শ্রীপুর কোয়ারী সরকারি ভাবে বন্ধ রয়েছে। কোয়ারীর জিরো লাইন হতে পাথর উত্তোলন হচ্ছে বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করছি। তিনি সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, আমি জৈন্তাপুরে নতুন যোগদান করেছি। শ্রীপুর বন্ধ কোয়ারী হতে পাথর উত্তোলনের বিষয়টি কেউ আমাকে অবগত করেনি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শ্রীপুর বিজিবি ক্যাম্পের সরকারি নাম্বারে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ হয়নি।