জাকির হোসেন সুমন , ব্যাুরো চীফ ইউরোপ :
ইউরোপে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন, ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম গত ২৪ মার্চ হল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার হলে ‘বাংলাদেশ: গণহত্যা উত্তর বিচার’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্র সংগঠন – ইউনিভার্সিটি ইউনিসেফ স্টুডেন্ট টিম দ্য হেগ এবং দক্ষিণ পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ান ক্লাবের সহযোগিতায় এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস থেকে আসা বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, কূটনীতিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া হাডসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক হোসেন হাক্কানি, জার্মানির দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউট হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ওল্ফগ্যাং-পিটার সিঙ্গেল, সুইস ইন্টার স্ট্র্যাটেজি গ্ৰুপের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, বার্লিন সোশ্যাল সায়েন্স সেন্টারের ফেলো ড. টমাসো ভার্জিলি এবং ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরামের প্রধান নির্বাহী বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মনজু ভন রোসপ্যাট ও রোহান শর্মা।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশে যে ঘৃণ্য গণহত্যা হয়েছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনো অর্জিত হয়নি যা কেবল দুঃখজনক নয়, মানবিক অপরাধও। যারা এই গণহত্যার শিকার হয়েছেন এই অন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে তাদের বংশধরদের সম্মান জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ এখনও ক্ষমা চাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এবং ১৯৭১ সালে কী ঘটেছিল তা স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য অন্যান্য দেশের দিকে তাকিয়ে আছে। বক্তারা বলেন, একাত্তরের গণহত্যার অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই জানতে হবে যে বাংলাদেশি মানুষ যারা সমান মানবাধিকার ভোগ করার অধিকার রাখে তাদের প্রতি কী আচরণ করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাবে সেই বীভৎসতার ইতিহাস, পাকিস্তান কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা আজ বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ম্লান হয়ে গেছে। ইউরোপের বাংলাদেশ সম্প্রদায় মনে করে যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তার রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার শিকারদের ন্যায় বিচার দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। সম্মেলনে ‘ওয়ার ক্রাইমস -১৯৭১’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।
জেনেভায় বিক্ষোভ: একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করে গত ২৫ ও ২৬ মার্চ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ ভবনে ঐতিহাসিক ‘ব্রোকেন চেয়ার’-এর সামনে দুই দিনব্যাপী এক বিক্ষোভ ও মানববন্ধন পালন করা হয়। এতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা যোগ দেন। প্রতিবাদ সভার প্রথম দিন উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ থেকে আগত শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ, জেনেভা এবং সুইজারল্যান্ড সেকুলার ফোরামের সহযোগিতায় এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান প্রথম দিন প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকেন।
তিনি বলেন, ‘ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তার সহযোগীদের দ্বারা বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি দেবার সময় এসেছে। গণহত্যার শিকার এবং তাদের বংশধরদের স্বীকৃতির মাধ্যমে সম্মান জানানোর এখনই উপযুক্ত সময়।” আরো যারা বক্তব্য রাখেন তারা হলেন, ড. মজিবুর রহমান, খলিলুর রহমান মামুন, নজরুল ইসলাম জমাদার, শ্যামল খান, অরুন বড়ুয়া, সসীম গৌরীচরণ, আবদুল হাই, অরুন বড়ুয়া ও পলাশ বড়ুয়া।