স্বপন কুমার রায় খুলনা ব্যুরো প্রধান:
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক কর্মসূচি ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’ এর আওতায় তৃতীয় ধাপে আরও ৬৫ হাজার পরিবার বাড়ি পাচ্ছে। এই ধাপের ঘরগুলো আরও মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার অবকাঠামো নির্মাণে আনা হয়েছে বেশকিছু পরিবর্তন। বাড়ানো হয়েছে নির্মাণ ব্যয়। আগে ইটের ভিত ও কলাম ছিল। এবার আরসিসি ঢালাইয়ের ওপর গ্রেট বিম ও কলাম দেওয়া হয়েছে। আগে শুধু জানালা ও দরজায় লিংটেল ছিল। এখন পুরো ঘরে দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত ঘরে কিছু ত্রুটি পেয়েছেন তারা। কোথাও দেওয়াল ফেটে যাওয়া, ধস বা মাটি দেবে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব ত্রুটি চিহ্নিত করে তৃতীয় ধাপে তা সমাধান করেই নির্মাণ হচ্ছে বাড়ি। যার কারণে আগের তুলনায় ব্যয়ও বেড়েছে। প্রথম ধাপে ঘর নির্মাণের বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় ধাপে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ৯৫ হাজার। আর প্রথম ধাপের চেয়ে ৮৮ হাজার ৫০০ এবং দ্বিতীয় ধাপের চেয়ে ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা বেড়ে তৃতীয় ধাপে বাড়িপ্রতি বরাদ্দ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে দিতে আশ্রয়ণের বিষয়টিকে আমরা বলছি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল। চলতি অর্থবছরে এ কার্যক্রমের আওতায় আসবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৮০৩ পরিবার। এতে ৩৯৭১ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপের কাজ চলছে। এতে ৬৫ হাজার ৪৭৪ পরিবার পাবে বাড়ি। তিনি বলেন, এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও একমাত্র প্রকল্প; যাতে একসঙ্গে এত পরিবারের জীবনমান উন্নয়ন করা হয়েছে। ভিটেমাটির পাশাপাশি হচ্ছে কর্মসংস্থান। সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গে চলে আসছে, পিছিয়ে পড়া বড় এ জনগোষ্ঠী।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে তৃৃৃতীয় ধাপে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। দুর্যোগ সহনীয় মাত্রায় বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়ির ভিতে আরসিসি ঢালাই দেওয়া হয়েছে। দেওয়ালের নিচে এবং উপরের চারপাশে লিন্টার টেনে দেওয়া হয়েছে। বাইরে যে তিনটি পিলার আছে সেটি আগে ইটের ছিল এবার আরসিসি ঢালাই দেওয়া হয়েছে। সবমিলে এবার যে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে, তা অনেক বেশি মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।
প্রকল্প প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকিউর রহমান জানান, তৃতীয় পর্যায়ের নির্মিত ঘরগুলোতে তিনটি কলামের পরিবর্তে তিনটি আরসিসি পিলার সংযোজন করা হয়েছে। অবকাঠামো অধিকতর টেকসই করার জন্য গ্রেট বিম সংযোজন করা হয়েছে। টানা লিংটেল সংযোজন করা হয়েছে। এতে ঘর আরও টেকসই হবে। চালের টিনের ফ্রেম অধিকতর টেকসই করার জন্য অ্যাংকর রড যুক্ত করা হয়েছে। ওয়ালের নিচেও সিসি সংযোজন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১ম ও ২য় ধাপে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি বাড়ি দেওয়া হয়েছে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের। এতে ২ শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা দুই রুমের ঘর করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রান্নাঘর, টয়লেট, সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ, আঙ্গিনায় হাস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষেরও জায়গা রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৃতীয় ধাপে ৬৫ হাজার ৪৭৪ পরিবার পাবে বাড়ি। চরাঞ্চলের জন্য করা হয়েছে ভূমিকম্প সহনীয় বিশেষ ডিজাইন। তৃতীয় ধাপে চরে ১ হাজার ৪২টি বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসাবে ঈদুল ফিতরের পর এসব বাড়ি হস্তান্তর করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের গৌহাইলবাড়ি গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর দ্বিতীয় ধাপের বাড়ি প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি আছে ভূমিহীনদের কাছে বাড়ি বুঝিয়ে দেওয়ার কাজ। আর তৃতীয় ধাপের কাজও প্রায় শেষের দিকে। তৃতীয় ধাপের বাড়ি নির্মাণরত রাজমিস্ত্রি নকুল কুমার জানান, বর্তমানে যে কাজ হচ্ছে এটি আগের চেয়ে অনেক উন্নত।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, অবৈধ দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। সাভারে মোট আট একর জমি আমরা উদ্ধার করেছি। এরমধ্যে শিমুলিয়া ইউনিয়নে এক দশমিক ৪১ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। এ জমি এক বিএনপি নেতার দখলে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এ জায়গা দখলমুক্ত করতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় সব বাধা অতিক্রম করা হয়েছে।