মোঃ কামাল হোসেন খাঁন মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
পবিত্র ঈদুল ফিতর কে কেন্দ্র করে মেহেরপুরের গাংনী বাজারে পঁচা মিষ্টির দেখা মেলার পর এবার নতুন করে আবারও পঁচা মিষ্টি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ঈদের সময় বিভিন্ন যায়গায় অর্ডার করে গাংনী বাজারের ব্যবসায়ী মিষ্টি আমদানি করলেও গত কয়েকদিন পূর্বে ঈদের আনন্দ শেষ হলেও বাজারে এখনও রয়েছে ঈদ উপলক্ষে তৈরি মিষ্টি। যা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
এমনটিই অভিযোগ করলেন গাংনী উপজেলার মাইলমারী গ্রামের গণমাধ্যম কর্মী দৈনিক শিকল এর ফারহানা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধার পূর্ব মূহুর্তে গাংনী উপজেলা শহরের আঃ মালেক স্টোর এন্ড ফল ভান্ডার থেকে মেয়ের জন্য রসগোল্লা ক্রয় করেন। পরে তা বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর প্যাকেট খুলতেই নাকে আসে পঁচা দুর্গন্ধ। মিষ্টির মধ্যে ৩ টা পোকাও পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।
এঘটনায় বুধবার (১১ মে), দুপুরের দিকে তিনি মিষ্টিগুলো গাংনী রিপোর্টার্স ক্লাবে পাঠান এবং মিষ্টির বিষয়ে বিস্তারিত খুলে বলেন। রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্যরা সত্যতা নিশ্চিতে প্যাকেট খুলে তা পঁচা ও দুর্গন্ধ প্রমাণিত হলে মালেক স্টোরে যাওয়া হয়। এতে মালেক স্টোরের স্বত্ত্বাধিকার তিনার ভুল স্বীকার করেন। এবং নতুন মিষ্টি দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, কোন কারণে পোকা পড়তে পারে। লেবার দিয়ে প্যাকেট করার সময় কোন ভুলের কারণে মিষ্টি পঁচে যেতে পারে। এজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন পূর্বে আমিন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারেও একই সমস্যা দেখা দেয়। গাংনী বাজারের সনামধন্য দু’টি মিষ্টির দোকানেই যদি এমন হয় তাহলে বাকি মিষ্টির দোকানের মিষ্টির গুনগত মাণ কেমন হবে এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
শুধু গাংনী বাজারই না উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মিষ্টি এবং দই কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মিষ্টির কারখানাগুলোতে অস্বাস্থ্যকর আর নোংরা পরিবেশে তৈরী হচ্ছে দই, মিষ্টি, রসগোল্লা, ছানা ও রস মালাই। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ময়লা কাপড় দিয়ে ঢেকে দই তৈরি করা হয়। অন্যদিকে উপজেলা শহরের নামকরা মিষ্টির দোকানের দই, মিষ্টি আর রসগোল্লাতেও ভেজাল! বেশ কয়েকটি দোকানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক ও মেয়াদোত্তীর্ণ রং মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে দই, রসগোল্লা, চমচম ও রসমালাই। এর সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তো আছেই। পাশাপাশি দই এবং মিষ্টি বিক্রির সময় ক্রেতাদের সাথে অভিনব কায়দায় প্রতারনা করেই চলছে মিষ্টি দোকানিরা।
সরেজমিনে ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে বিভিন্ন মিষ্টির কারখানা ও দোকান ঘুরে দেখা গেছে, গাংনী উপজেলা শহরের নামকরা মিষ্টির দোকানগুলো থেকে শুরু করে প্রত্যান্ত অঞ্চলের মিষ্টির দোকানগুলো একই কায়দায় ক্রেতাদের সাথে প্রতারনা করে আসছে। এসব দোকানে অসচেতনতার কারণে ক্রেতারা পন্যের গুনগত মানের পাশাপাশি ওজনে পরিমাণে কম জিনিস নিয়েও বেশী দাম দিচ্ছে। মোট কথা যে পরিমাণ দাম দিয়ে দই মিষ্টি কিনলো সে পরিমাণ দই মিষ্টি ক্রেতারা কখনই পাচ্ছেনা। এর কারণ হলো পাতিলের মিষ্টি কেজি হিসেবে বিক্রি করলেও কেজি পরিমাণ দই ক্রেতারা পাচ্ছেনা। মিষ্টির প্যাকেটের ভিতরে ওজন বাড়ানোর জন্য দোকানিরা ভারী কাগজ ব্যবহার করে। এতে বিক্রেতারা মিষ্টির সমপরিমাণ দাম দিয়েই কাগজ কিনেও নিচ্ছে। এতে করে বছরের পর বছর ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা শহর ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের সকল মিষ্টির দোকানে অভিযান পরিচালনা করে মিষ্টির গুনগত মাণ পরীক্ষাসহ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান ভুক্তভোগী জনগণ।
গাংনী শহরের আঃ মালেক স্টোর এন্ড ফল ভান্ডারে পঁচা মিষ্টি বিক্রির বিষয়ে ফোন করা হলে গাংনী উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মশিউর রহমানের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।