![](https://alochitokantho.com.bd/wp-content/uploads/2022/05/received_550294689809360-1024x462.jpeg)
![](https://alochitokantho.com.bd/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জগন্নাথপুরে বন্যা:ত্রানের আশায় পানিবন্দি মানুষের অপেক্ষ
রনি মিয়া জগন্নাথপুর প্রতিনিধিঃ
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে জগন্নাথপুরে এর প্রভাব ছিলনা। তবে গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ক্রমে ক্রমে উপজেলার বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হচ্ছে। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ও উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার হাওর এলাকার হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে উপজেলার ৬৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অধিকাংশ লোকজন আত্মীয়- স্বজনদের উঁচু বাড়িতে আশ্রয় নেন। এছাড়া ও উপজেলার ৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না পানিবন্দি লোকজন।
জানা গেছে, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা, ইটাখলা, নলজুর, রত্নাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জগন্নাথপুর পৌরশহরে নলজুর নদী উপচে জগন্নাথপুর বাজারের সবজি ও মাছ বাজার প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও জগন্নাথপুর পৌরসভার ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের কুমারখালি থেকে নোয়াহাটি নামক স্থানের পুরো রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌর শহরের ৫ নং ওয়ার্ডের হাসিমাবাদ এলাকায় অনেকের বসত ঘরে ঢলের পানি ঢুকে পড়ায় গরু ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলার রানীগঞ্জ, হলদিপুর, কলকলিয়া ইউনিয়নে গ্রামের রাস্তায় বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। উপজেলার উজান এলাকা ভবেরবাজার-সৈয়দপুর-নয়াবন্দর সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া পাটলী ইউনিয়নের লামারসুলগঞ্জ-লাউতলা সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়া যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি হয়। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত এলাকার মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হওয়ায় বিভিন্ন গ্রামে বাঁশের সাঁকো তৈরী করছেন লোকজন। হাওরের অনেক খামার থেকে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। ফলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন মৎস্য চাষীরা। হাওর এলাকার বসতবাড়িতে তিল পরিমাণ জায়গা নেই। অসংখ্য বাড়ির আঙিনায় ২ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে।যার ফলে পানিবন্ধি মানুষ ত্রানের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দী মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামের সড়ক ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় চরম ভোগান্তির পাশাপাশি এসব পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
জগন্নাথপুর পৌর এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের হাসিমাবাদ নামক স্থানের বাসিন্দা মহি উদ্দিন জানান, ওই এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন চরম ভোগান্তিতে আছেন।
কুমারখালি সড়কের আগলা বাড়ির বাসিন্দা সোহেল মিয়া জানান, তাদের এলাকার পুরো রাস্তা ও বাড়িঘর পানির নিচে। এলাকার লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এদিকে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রান এলাকায় পৌছায়নি বলে দুর্গত এলাকার লোকজন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলার চিলাউড়া উচ্চ বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যা কবলিত আশ্রিত মানুষের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। রবিবার (২২ মে) বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে দূর্যোগ ব্যবস্হাপনা কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জগন্নাথপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ কর্মকর্তা হাসান গাজী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধ মেরামতে ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি ব্যাগ।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম জানান, বন্যা মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। বন্যার্তদের জন্য প্রাথমিকভাবে ৪০ মেট্রিক্স টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। গত তিনদিন ধরে প্লাবিত বিভিন্ন এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়।