মোঃ আলাউদ্দীন মন্ডল রাজশাহীঃ
রাজশাহীর পুঠিয়া বানেশ্বর বাজারে এসেছে হিমসাগর আম। সেই সাথে গোপালভোগ আমের দাম বেড়েছে। বাজারে দেখা মেলেনি রাণিপছন্দ আমের। আমের সরবরাহ ভালো, সেই অনুযায়ী বেচাকেনা জমে উঠেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা বিক্রেতারা।
সরেজমিনে গতকাল শনিবার (২৮ মে) বাজারে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করা হিমসাগর আম বিক্রি হতে দেখা গেছে। সেই সাথে গোপালভোগ আমের দাম বৃদ্ধির চিত্র ফুটে উঠেছে।বাজারে হিমসাগর ও গোপালভোগ দুটি আমই সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিমণ লক্ষণভোগ আম ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং তুতাপড়ি, আধাসুন্দরী, রত্নাসহ আঁটির আমগুলো ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই দিনে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক আম বাজারে এসেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, হিমসাগর আম আজই প্রথম বাজারে এসেছে। চাহিদা ও দাম বেশ ভালোই যাচ্ছে। হিমসাগর আম প্রতিমণ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই দামটি প্রথম অবস্থায় গোপালভোগ আমেরও ছিল। ২২ মে গোপাল ভোগ আমের দাম কমে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ সেই আম ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। আরও বাড়তে পারে বলেও তিনি জানান।
চাষি ও আম ব্যবসায়ীদের মুখে আমের চেয়ে ব্যবসার প্রশংসায় বেশি।
উজ্জল নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, গতবছর ৩ লাখ টাকা দিয়ে ৫ টা আম বাগান নিয়েছিলাম। লোকসান হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ টাকা। এবছর চুক্তিতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকায় ১৫ টি আমের বাগান নিয়েছি। প্রতিটি আমের গাছে আশানুরূপ আম পেয়েছি। কোনো প্রতিবন্ধকতা এবছর নেই তাই ব্যবসায় লাভ হবে বলে আশা করছি।
এদিকে নিজস্ব উদ্যোগে আবু সাইদ আমের ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স শেষ করেছি। তিন বছর থেকে সিজনাল আমের ব্যবসা করছি। আমাদের রাজশাহীর আমের চাহিদা সারা দেশ জুড়ে। দেশের বাইরেও আম পাঠানো হচ্ছে। আমের মেলা বসেছে অনলাইন বুকিং-এ। কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো হচ্ছে। আমের উৎপাদন খুব বেশি নয় এজন্য আমের দাম এবছর বাড়তিই থাকবে।
ধীরে ধীরে গোপাল ভোগের দাম তুঙ্গে উঠেছে। শুরুতে কারণ জানতে চাইলে দুর্গাপুর থেকে আম নিয়ে আসা হাবিবুর বলেন, ঝড় বৃষ্টি ও তাপমাত্রায় ঝরে গেছে অনেক গোপালভোগ আম। রাজশাহীর গোপালভোগ আমের মত আর কোনো জায়গার আম এত সুস্বাদু কিনা জানিনা। বাজারে এত দাম দেখা অনেকেই অবাক হতেই পারে। এই আমই ভালো বলে অনলাইনে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি অর্থাৎ ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ বিক্রি করছেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসকের বেঁধে দেয়া সম্ভাব্য সময় অনুযায়ী আম চাষী ও বাগান ব্যবসায়ীরা ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই বারি-৪ ও আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গোলমতী, ২০ আগস্ট ইলমতি আম নামাতে পারবেন। এখনো বাজারে সাড়া মেলেনি রানিপছন্দ আমের। তবে রাজশাহী সাহেব বাজার , উপশহর নিউমার্কেট প্রতি কেজি রাণিপছন্দ আম ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
রাণিপছন্দ আম বানেশ্বর বাজারে না ওঠার কারণ সম্পর্কে রিয়াদ ফল ভান্ডারের মালিক রাজ্জাক নামের একজন জানান, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ ও হিমসাগর বা খিরসাপাত আম নিয়েই ব্যস্ত চাষিরা। রাণিপছন্দ আমের চাহিদা কম। কৃষকেরা এখনো বাজারে নিয়ে আসেনি।
হয়তো পরিপক্ক হয়নি এখনো।বানেশ্বর বাজারের ইজারাদার সুমন শেখ বলেন, এবছর আমের যত্ন অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে নেয়া হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। তারপরও ভেজাল ও ফরমালিনযুক্ত আম বাজারে দেখা য়ায় নি। ভালো আম ভালো ব্যবসা। দিনের পর দিন আমের চাহিদা ব্যাপক বাড়ছে এই বাজারে আসা কোন চাষি বা পাইকারি ক্রেতা বা বিক্রেতার কোন ছলচাতুরির প্রয়োজন নেই বলে মনে করছি।