ধনীদের ছাড় দিতে গিয়ে গরীবের কথা মনেই নেই অর্থমন্ত্রীর……!
. স্বপন কুমার রায় খুলনা ব্যুরো প্রধান
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ঢাক-ঢোল পেটানো হলেও কেবল চাহিদার লাগাম টানায় সীমাবদ্ধ রইল এবারের বাজেট। গরিবও পেলেন না হাঁফ ছাড়ার জায়গা। নতুন নতুন করজাল বিস্তৃত হলো ছোট, মাঝারি বহু খাতে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে যখন আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর পথে অর্থনীতি, তখনই টালমাটাল বিশ্ব। সেই আঁচ দারুণ ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকেও। ফলে এক রকম অস্বস্তি নিয়েই বাজেট হাতে সংসদে অর্থমন্ত্রী।
তবুও সাম্প্রতিক অর্থনীতি নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ অর্থমন্ত্রী, আসছে অর্থবছরে ব্যয় করার ঘোষণা দেন ৬ লাখ ৮২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এই অঙ্ককে ১০০ টাকার অনুপাতে বিচার করলে যার ১৪ টাকা ৭০ পয়সা ব্যয় করবেন শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে, যা তিনি খানিকটা কমিয়েছেন বছর ব্যবধানে।
অন্যদিকে ব্যয় বাড়িয়েছেন ঋণের সুদ, পরিবহন ও জনপ্রশাসনে। অর্থাৎ এই চার খাতেই তার চলে যাবে পাঁচ ভাগের তিন ভাগ। ফলে স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এবারও তিনি নজর দেননি খুব বেশি।খরচ করতে চাইলেও অর্থমন্ত্রী থাকবেন অর্থ সঙ্কটে। এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি আদায়ের দায়িত্ব দিলেন ঠিকই। কিন্তু তারপরও তার ঘাটতি থাকছে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। যা তিনি মেটাবেন ধারকর্জ করে। আর এজন্য তার বড় নির্ভরতা দেশীয় ব্যাংকখাত ও বিদেশি উৎসের ওপর।
শুরু থেকেই অর্থমন্ত্রী সোচ্চার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দামে লাগামহীন পাগলা ঘোড়া ছুটে চললেও আসছে অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখতে চান। আর এজন্য মূল অস্ত্র হিসেবে লাগাম টানবেন চাহিদার অন্যদিকে বাড়াবেন পণ্য ও সেবার সরবরাহ। যদিও তার নির্দিষ্ট কোনও রূপরেখা দেননি বাজেট বক্তৃতায়।
বেশি বেশি বিনিয়োগের প্রত্যাশায় ছাড় দিয়েছেন করপোরেট করে। পাচার হওয়া সম্পদ ফেরাতেও থাকছে বড় টোপ। পোশাকের মতো অন্যান্য রপ্তানিখাতের করও করেছেন সমান ১২ শতাংশ। অর্থাৎ মোটা দাগে সুবিধা বাড়িয়েছেন ধনী, অতিধনীদের। আড়াই শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছেন প্রবাসী আয় টানতে। কিন্তু গরিব মানুষের জীবন মান উন্নয়নে নেই তেমন কোনও উদ্যোগ। দুস্থ কিংবা অতিদরিদ্রদের ভাতা বাড়িয়েছেন সামান্যই তবে চেষ্টা ছিল সংখ্যা বৃদ্ধির। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় তা একেবারেই কম। বাজার ঠিক রাখার খানিকটা চেষ্টা করেছেন ভর্তুকি বাড়িয়ে। যার বেশিরভাগই অবশ্য ব্যয় হবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রণোদনায়।
হোটেল, রিসোর্ট, খামারসহ প্রায় সবখানেই করের জাল বিস্তৃত করবেন নতুন অর্থবছরে। ছাড় দিতে চান না প্রথম শ্রেণির রেলে ভ্রমণকারীদেরও। এছাড়া, দুর্নীতি দমন, আর্থিক খাতের সংস্কার, খেলাপি ঋণ কমানোসহ এবারও তিনি বড় করেছেন প্রত্যাশার ঝুড়ি।