অসকস বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মতবিনিময় ও সাধারণ সভায় সদস্যদের কল্যাণে ৩০টি দাবিসহ স্মারক লিপি প্রদান
রাকিব হোসেন, ঢাকাঃ
অবসর প্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনী কল্যাণ সোসাইটি(অসকস)এর কেন্দ্রীয় মতবিনিময় ও সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।আজ ১১ জুন শনিবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় আব্দুস সালাম হলে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। অসকস বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্ণেল (আব:)ফারুক খান উপস্থিত থাকার কথা ছিলো কিন্তু জরুরী রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি।তবে ভার্চুয়ালি উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি যোগদান করেন এবং তাদের প্রত্যাশিত দাবি গুলো বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে আশ্বাস দেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক এবং বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদ এর সভাপতি মেজর (অব:)আতমা হালিম বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অসকস বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অসহায় সদস্যগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ভক্তি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন এবং তারা স্বাধীনতাত্তোর যে সকল সদস্য গণ অবসর গ্রহণ করেছেন কিন্তু জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ গ্রহণ করেন নাই এবং শতভাগ পেনশন নিয়ে অবসর গ্রহণ করেছেন তাহারা বর্তমান উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে উপযুক্ত অভিভাবক মনে করে প্রধানমন্ত্রীর সমীপে তাঁদের মনের চাঁপা অভিব্যক্তি গুলো তুলে ধরেন। মতবিনিময় সভার সভাপতিত্ব করেন সার্জেন্ট (অব:) মুহাম্মদ আহসান হাকিম সিএমপি। তিনি তার বক্তব্যে বর্তমান সরকারের যুগপোযুগী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সি প্রসংশা করে বলেন মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি সহ বেশ কয়েকটি ভাতা এবং তাদের গৃহনির্মাণের জন্য সহজ অনুদান ইত্যাদি যা সরকারের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল করেছে।অন্যদিকে সে সময় যে সকল বাংলাদেশের সামরিক সদস্যগণ পাকিস্তানের বন্ধি ক্যাম্পে আটকা পড়েছিলেন পরবর্তীতে বন্ধি চুক্তির মাধ্যমে দেশে ফিরে কয়েক বছর চাকরি করে অবসরে গিয়েছেন ।তাদের বর্তমান দূর্বিসহ পরিস্থিতির কথা শুনলে অবশ্যই জাতির জন্য লজ্জাজনক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বলে তিনি মনে করেন।অবসর ভোগীদের দূর্বিসহ জীবনে সামান্য পেনশন সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও তা বর্তমান বাজারে বেঁচে থাকার মতো নয় বলে দাবি করেন।তাই রাষ্ট্রের এই সূর্য সন্তান সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যগণের অবসর পরবর্তী অবহেলিত শোষিত এবং অত্যাচারিত দৈন্যদশা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর পেনশন ভোগী সদস্যদের কল্যাণের জন্য ৩০ টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো নিম্নরুপ:(১)অবসর প্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা মাসিক ৪১৮ টাকা হারে মাসিক রেশন ভাতা পেয়ে থাকেন।যাহা বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী খুবই নগন্য। বর্তমান বাজারের সাথে মিল রেখে রেশন ভাতা নূন্যতম ৩০০০/- টাকা নির্ধারণ করা অথবা পূর্বের ন্যায় রেশন প্রদানের ব্যবস্থা করা।যা অবসর প্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য দ্বারা পরিচালিত উপজেলা সোলজার হেল্প ডেক্স এর মাধ্যমে প্যাকেটজাত রেশন সরবরাহ ও বিতরণ করা।(২) অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সকল সদস্যদের স্ত্রীসহ পরিবারকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সবরকম চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং দেশের অন্যান্য সকল সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা ও বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।(৩) অবসর প্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের জন্য চীন ভারত ও পাকিস্তান সহ অন্যান্য দেশের মতো সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মত এক পদ এক পেনশন পদ্ধতি চালুর ব্যবস্থা করা।(৪) অবসর প্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের দুঃখ দূর্দশা লাগবের জন্য এবং প্ল্যাটফর্মে রাখার জন্য অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনী কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।(৫)প্রতিটি জেলায় কার্যকরী সশস্ত্রবাহিনী সোলজার বোর্ড স্থাপন করা। সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের জন্য সি এম এইচ এর বিকল্প হিসেবে প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও ঔষধ সহ সোলজার বোর্ড হতে চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।(৬)ঢাকা সেনানিবাসের আশেপাশে উন্নত মানের বহুতল বিশিষ্ট সেনা বিশ্রামাগার স্থাপন করা।যাতে করে দূর দূরান্ত থেকে কোন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য রাজধানীতে আসলে সুন্দর ভাবে নিরাপদে রাত্রী যাপন করতে পারে।(৭)প্রতিটি জেলা উপজেলার সামরিক সদস্যদের জন্য (রানিং/অব:)আইনি সেল চালু করা।যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হইবে।
(৮)অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্বশাষিত প্রতিষ্ঠানে চুক্তি ভিত্তিক নিয়ােগ প্রদানের ব্যবস্থা করা। (৯)অবসরগ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের সন্তানদের সরকারি চাকুরিতে ১০ শতাংশ কোটা চালুর ব্যবস্থা করা। (১০)সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যগণ মৃত্যুবরণ করলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাফন/কাফন এবং অন্তোষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে খরচের জন্য এককালীন নূন্যতম এক লক্ষ টাকা অণুদান প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।(১১) ১৯৭১ সালে যে সমস্ত সৈনিক পাকিস্তানে আটক ছিলেন তাদেরকে মুক্তিযােদ্ধাদের সম্মান ও স্বীকতি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ১২। অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের সন্তানদের সমস্ত স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য চাকরিকালীন সময়ের মতাে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। ১৩। অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের ছেলে-মেয়েদের কে উচ্চ শিক্ষার জন্য সেনা কল্যাণ সংস্থা থেকে সহজ শর্তে সমস্ত খরচ/ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থা করা। ১৪। সেনা কল্যাণ সংস্থা কর্তৃক তৈরিকৃত সকল প্রকার দ্রব্য সামগ্রী অবসরপ্রাপ্ত সশন্ত্রবাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলায় ডিলার নিয়োেগের মাধ্যমে বিপণনের ব্যবস্থা করা। ১৫। অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের বয়স বিবেচনা করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অন্তত ১০ বৎসরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়ােগের ব্যবস্থা করা