কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ মা বাঁচাও, মা বাঁচাও,’ বলে চিৎকার করতে করতে নীলকমল নদে ডুবে যায় ছেলে ও মেয়ে। এ দৃশ্যের কথা মনে হতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মা সামিনা খাতুন। মায়ের বুকভরা আর্তনাদ যেন আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলেছে। আর হতভম্ব বাবা রহিজ উদ্দিন বুকে হাত চাপরিয়ে কাঁদছে আর কাঁদছে।
শুক্রবার (১ জুলাই) গভীর রাতে দালালের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিএসএফের ধাওয়ায় নদের পানিতে ডুবে যায় দুই শিশু। মা বাবা সাঁতরে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও শনিবার (২ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই শিশুর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ শিশুদের দাদা জিয়া উদ্দিন জানান, প্রায় ১৬ বছরে আগে অভাবের রহিজ উদ্দিন অন্যদের সঙ্গে কাজের সন্ধানে ভারতের দিল্লিতে ইটভাটায় কাজ করতে যান। সেখানে কাজের সুবাধে ২০০৫ সালে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানার নয়ারহাট এলাকার সাজেদুল হকের মেয়ে সামিনা খাতুনের সঙ্গে রহিজ উদ্দিনের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে জন্ম হয় পারভীন ও সাকেবুলের। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
রহিজ উদ্দিনের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম শুকাতী গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত একাব্বর আলী। শিশুদের হারিয়ে শোকাহত গোটা এলাকা। শনিবার বিকালে তাদের বাড়িতে গেলে দুই সন্তানকে ফেরত চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রহিজ উদ্দিন ।
রহিজ উদ্দিন জানান, ঈদুল আজহা পালনের জন্য প্রথমবারের মতো সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশে আসছিলেন তিনি। তাদের নিরাপদে দেশে আনার জন্য ভারতের দালালদের সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা চুক্তি করা হয়। পরে শুক্রবার রাতে তাদেরকে সীমান্তে কোনো এক বাড়িতে রাখেন দালালরা। সেখানে আরও ২০-২৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ছিল। গভীর রাতে আন্তর্জাতিক পিলার ৯৪৩ এর পাশে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্ত এলাকার নদী পাড়ে নিয়ে আসা হয় তাদের।
তিনি জানান, ভারতের শেউটি ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা লাইট জ্বালিয়ে দেখার পর তাদের ধাওয়া করে। এসময় দালালরা তড়িঘড়ি করে নদী পার হওয়ার জন্য বলে। তিনি জিনিসপত্র নিয়ে নদীর মাঝে চলে যান। আর তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে নদীতে নামেন। কিন্তু তারা কেউই সাঁতার জানে না। স্রোতের টানে সন্তানরা মায়ের হাত থেকে ফসকে নিখোঁজ হয়ে যায়। পানিতে ডুবে অনেক চেষ্টা ও খোঁজাখুঁজি করলেও সন্তানদের সন্ধান পাননি তিনি।
শনিবার রাত ৮টায় লালমনিরহাটের ১৫ বিজিবি কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন জানান, ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পথে দুটি শিশু নিখোঁজ হয়েছে বলে লোকমুখে খবর পেয়েছি। বিষয়টি বিএসএফকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তারা সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি।