মোঃ খলিলুর রহমান সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দুর্গাবাটিতে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পানির স্রোতে ৫ হাজারের বেশি মৎস্য ঘের ও কাঁকড়ার খামার ভেসে গেছে। এতে প্রায় কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই এলাকার মাছ চাষি ও কাঁকড়া খামারিরা।
এদিকে বাঁধ ভাঙার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাঁধ মেরামত করা যায়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি বাঁধ মেরামত করা সম্ভব না হয় তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৫ হাজারের বেশি মাছের ঘের ও কাঁকড়া খামার। এসব ঘের ও খামারে সাধারণ চিংড়ি, কাঁকড়াসহ মাছের পোনা চাষ হতো। ধারণা করছি, সবমিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তালিকা প্রস্তুত শেষ হলে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। জেলা প্রশাসক আশ্বস্ত করেছেন তিনি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করবেন।
বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে আরও ছয় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছে। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন পানিবন্দি এলাকার সমস্ত মানুষেরা।
এদিকে জোয়ারের তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধটি গত দুই দিনেও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এখনও এখানকার মানুষের বাড়ির উঠানে চলছে জোয়ার-ভাটা। নিরাপদ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অপরদিকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন নারীরা।
গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাত ১১টার দিকে প্রবল জোয়ারের চাপে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটির প্রায় দেড়শ ফুট বেড়িবাঁধটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, পূর্ব পুড়াকাঠলা, পশ্চিম পুড়াকাঠলা, আড়ঙ্গাশিয়া, করবাড়ি, দাতিনাখালি, ভামিয়া, মাদিয়া ও নীল ডুমুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে কালকের ভিতরে বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব না হলে নতুন করে আটুলিয়া ইউনিয়নের একাধিক গ্রামও প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।স্থানীয়রা আরও বলেন, বর্তমানে কলাগাছের ভেলা এবং নৌকা দিয়ে বাড়িতে যাতায়াত করছেন অনেকেই। চলাচলের রাস্তা ডুবে যাওয়ায়, বাড়িঘরে পানি ওঠায় ও রান্না করতে না পারায় শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় চারিদিক পানিতে ডুবে আছে। ভেলায় করে চলাফেরা করতে হয়। চারিদিকে পানি থাকলেও কোথাও খাওয়ার পানি নেই। গোসল করতে হচ্ছে নোঙরা ও লবণাক্ত পানিতে। যেই পানিতে পায়খানা প্রসাব আবার সেই পানিতেই গোসল করতে হচ্ছে। তবে দ্রুততম সময়ের ভিতরে বাঁধ মেরামত সম্ভব না হলে বদ্ধ পানির মধ্যে থাকার কারণে জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নদী ভাঙ্গন এলাকায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিনামূল্যে সুপেয় পানি পৌঁছে দিতে কাজ করছে স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিইও ইয়ুথ টীম।
এ বিষয়ে বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাতে প্রবল জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটির বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় এখন পর্যন্ত ১০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে দুর্গত এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পাউবোর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্তা, দঁড়ি, বাঁশ ও পেরেকসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ৬০০ ফুট এলাকায় পাইলিং করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে তীব্র জোয়ারের কারণে কাজ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস,এম জগলুল হায়দার বলেন, এ ধরনের বিপর্যয় ইতিপূর্বে কখনও আমরা দেখিনি। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য। মানুষ খুব দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি দ্রুততম সময়ের ভিতরে আমরা স্থায়ী সমাধান পাব।
সর্ম্পকিত খবর সমূহ.
November 21, 2024