রাকিব হোসেন,ঢাকাঃঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক আবুল তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা মিথ্যা, বানোয়াট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছেন।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
এনামুল হক আবুল জানান, গত ১৬ আগস্টের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। মামলাটি করেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিমউদ্দিনের মেয়ে শিবা আক্তার যুথী। তাকে এক নম্বর আসামিসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন যুথী। কিন্তু মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঘটনার বর্ণনা দেন এনামুল। বলেন, গত ১৬ আগস্ট রাত আনুমানিক ১১টায় পল্টন থানাধীন শান্তিনগরে অবস্থিত হোটেল হোয়াইট হাউজে বসে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ১৭ আগস্টের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান আলী রেজা খান রানা, পল্টন থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম সরকার, পল্টন থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ নাজমুল হোসাইন মিরন। রাত পৌনে ১২টার দিকে মিরনের মোবাইলে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সেখানে এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে টেবিলে থাকা ফুলদানি দিয়ে মিরনকে মারতে তেড়ে যান। আমরা উপস্থিত সবাই তাকে বহু কষ্টে নিবৃত করি। আমি তার হাত ধরে পাশে বসাই, তখনই বুঝতে পারি তিনি মদ্যপ। এক পর্যায়ে তাকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি। তার অাচরণের কারণ জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন জানান, শেখ নাজমুল হোসাইন মিরন তার মেয়ে সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাজে মন্তব্য করেছেন। মিরনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উক্ত বিষয়ে একেবারেই অবগত নন তিনি। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে জসিম উদ্দিনকে যাবতীয় প্রমাণসহ ১৭ আগস্টের কর্মসূচির পর আমার অফিসে আসতে বলি। এরপর তাকে নিয়ে আমরা সবাই হোটেল থেকে বের হয়ে যাই। জসিমও সেখান থেকে নির্বিঘ্নে হেঁটে বেরিয়ে গেছেন। যা সিসিটিভি ফুটেজে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ১৭ আগস্ট রাতে জানতে পারি জসিম উদ্দিনের মেয়ে শিবা আক্তার যুথী আমাকে এক নম্বর আসামি করে ১০ জনের নামে মামলা দিয়েছেন। জসিম উদ্দিনের মেয়ে যুথী গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে ও মামলার এজাহারে বলেছেন, তাকে পল্টন থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করায় কাউন্সিলরের লোকজন সংক্ষুব্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। সেই বিষয়ে তার বাবা কথা বলার জন্য হোটেল হোয়াইট হাউজে গিয়েছিলেন। যুথী সত্যিকার অর্থে পল্টন থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কিনা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেরা বেগমকে লিখিতভাবে জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ আগস্ট তিনি আমাকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, শিবা আক্তার যুথী নামে কোনো মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী রয়েছে কিনা তা তার জানা নেই এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ধানমন্ডি ও কলাবাগান থানা ব্যতীত কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। সুতরাং মিডিয়া ও মামলার এজাহারের মাধ্যমে শিবা আক্তার যুথী পল্টন থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার যে তথ্যটি দিয়েছিলেন তা মিথ্যা ও বানোয়াট। যা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী।
এনামুল হক বলেন, শিবা আক্তার যুথী গণমাধ্যমে বলেছেন যে, তার বাবাকে হোটেল হোয়াইট হাউজে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার বাবা অর্থাৎ জসিম উদ্দিন পল্টন থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ নাজমুল হোসাইন মিরনকে নিজেই যে ফোন দিয়ে হোটেল হোয়াইট হাউজে এসেছিলেন তা তার কললিস্ট দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে। পরবর্তীতে জসিম উদ্দিন ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন তিনি নিজেই হোটেল হোয়াইট হাউজে গিয়েছিলেন। মামলার এজাহার ও তাদের মৌখিক বিবরণে কোনো মিল নেই। সুতরাং উক্ত মামলাটি যে মিথ্যা তা সহজেই প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া উক্ত মামলায় যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬ জন ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন না। হোটেল হোয়াইট হাউজের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই এর সত্যতা মিলবে।