মোঃ খলিলুর রহমান,সাতক্ষীরাঃবর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিদ্যুৎ মানুষের একটি অপরিহার্য প্রয়োজন। শহরে শিল্পায়নের পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ে ফসল উৎপাদনে বিদ্যুৎ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে।
সাতক্ষীরায় বর্ষা মৌসুমে তীব্র খরায় যখন আমন আবাদ ব্যাহত হচ্ছে তখন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সেচ ব্যবস্থাপনায় ২৩ হাজার ৮শ ৭৪ একর জমিতে ধানের চাষাবাদ হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় কেবলমাত্র ধান নয় পাট, হলুদসহ বিভিন্ন সবজি ও মৎস্যঘেরে পানির জন্য কৃষকেরা হাহাকার করছে। সাতক্ষীরা জেলার ৭টি উপজেলা- সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, তালা এই ৩টি উপজেলায় অর্থকারী ফসল সহ নানা সবজি উৎপাদন হয়। অন্য ৪টি উপজেলা- আশাশুনি, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগরে ধানের পাশাপাশি মাছ চাষ করা হয়। মৌসুমে বৃষ্টি না থাকায় মৎস্যঘেরগুলোতে সাতক্ষীরা পিবিএস’র সেচ সংযোগই কৃষকদের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় মোট সেচ গ্রাহকের সংখ্যা ৪ হাজার ৬শ ৪৩ জন। এসমস্ত সেচ সংযোগ বোরো আবাদ মৌসুমে ধানচাষ শেষ হলে বেশিরভাগ বিচ্ছিন্ন থাকে সাতক্ষীরা পিবিএস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় বিচ্ছিন্ন সংযোগগুলো পুনরায় চালু হয়েছে। বর্তমান ৩৯৭৯টি সেচ সংযোগে মাছ ও ধানচাষ হচ্ছে। একদিকে জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হতে বললেও সাতক্ষীরা পিবিএস খাদ্য উৎপাদনে দেশ ও কৃষকদের কথা মাথায় রেখে চাহিদার ঘাটতি থাকলেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রেখেছেন। বোরো আবাদ মৌসুমে গড় প্রতিমাসে ৩৫,৮৭,১৪০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হতো। বর্তমান বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না থাকায় প্রায় একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। এ মৌসুমে গড় মাসে ৩০,৩৮,৭৪৭ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রান্তিক পর্যায়ের সেচ গ্রাহক সাতক্ষীরা সদরের দেবনগর গ্রামের ওসমান গণি (৫৫), যোগরাজপুরের আব্দুল ওয়াদুদ (৪৫), তালার ধলবাড়িয়া গ্রামের শাহিনুর রহমান (৪৮) সহ একাধিক কৃষকেরা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সেচ সংযোগ থাকায় কোনভাবে আমন আবাদ করতে সক্ষম হচ্ছি। অনেক কৃষকের জমি ফেটে চৌচির হচ্ছে। তারা আবাদ করেও বৃষ্টি না থাকায় ক্ষেতের ধান নষ্ট হচ্ছে। আব্দুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, তার সেচ সংযোগের ১৮ বিঘা জমি আমন আবাদ হয়েছে। ধারণ ক্ষমতার বাইরে অনেক বেশি জমি পতিত রয়েছে। চোখের সামনে অনাবৃষ্টির ফলে আবাদী জমি পতিত, এযেন ভাবতেই চোখে জল চলে আসে। সেচ গ্রাহকেরা জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলা করতে লোডশেডিং চালু রাখলেও কৃষকদের নির্দিষ্ট সময়ে সেচপাম্প চালু করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। কৃষকেরা জানিয়েছেন, অনাবৃষ্টি ও এই খরার সময় পল্লী বিদ্যুৎই যেন একমাত্র আশাবাদী। এবিষয়ে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বিদ্যুতের এ লোডশেডিং এর সময়েও সেচ গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা অব্যহত আছে। নতুন গ্রাহক সেচ সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন করলেই দ্রæততার সাথে সহজ শর্তে সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা খামার বাড়ির পরিচালক কৃষিবিদ ড. মুহাম্মদ জামাল উদ্দীন জানিয়েছেন এবারের চলতি মৌসুমে আমান আবাদের লক্ষ্য মাত্র ধরা হয়েছে ৮৯৯১০ হেক্টর জমিতে। এখনো আবাদ চলছে। বৈদ্যুতিক সেচ সংযোগের মাধ্যমে কি পরিমাণ জমিতে আমন আবাদ হয়ে তার নির্দিষ্ট দিতে পারেনি। তবে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় সাতক্ষীরায় এক-তৃতীয়াংশ জমিতে আমন আবাদ হচ্ছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে।