নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিশ্বখ্যাত আলেম আল্লামা ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-কারজাভি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কাতারে রাজধানী দোহায় জোহরের নামাজের সময় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। ড. ইউসুফ আল-কারজাভি মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামী তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ।
বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম স্কলার ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্ষীয়ান আলেমেদ্বীন শায়খ ড. ইউসুফ আল-কারজাভি ইন্তেকাল করেছেন।
কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা ও সৌদি সংবাদ মাধ্যম আল-আরাবিয়া ইউসুফ আল-কারজাভির টুইটার অ্যাকাউন্টের বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আল্লামা ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-কারজাভির ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন আঞ্জুমানে দাওয়াতে ইসলাহ বাংলাদেশের মুহতারাম আমীর, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের স্থায়ী কমিটির সদস্য, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মেহেরিয়া মুঈনুল ইসলাম সরফভাটা রাঙ্গুনিয়া চট্টগ্রাম, বাংলাদেশের সম্মানিত মহাপরিচালক মাওলানা আনাস মাদানী সাহেব দা. বা.।
আজ (২৬ সেপ্টেম্বর ২২ ইং) সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে প্রেরিত এক শোকবার্তায় মাওলানা আনাস মাদানী বলেন, আল্লামা ড. আল্লামা ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-কারজাভি রাহ. মুসলিম জাহানের ইসলামী বিপ্লব প্রত্যাশীদের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন।
শায়খ প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-কারজাভি (১৯২৬-) মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামি তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। মুসলিম ধর্মতত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সে (International Union of Muslim scholars)-এর সাবেক চেয়ারম্যান। আধুনিক উদ্ভূত নানা জটিল সমস্যার সাবলীল ও গভীর ইজতিহাদ ভিত্তিক সমাধান মূলক শতাধিক গবেষণা-গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। তার গ্রন্থগুলো প্রকাশের পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে জ্ঞানী, গবেষক, বোদ্ধা মহল ও সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা লাভ করে।
ইউসুফ আল কারজাভি মহান প্রভুর রহমতের কাছে চলে গেছেন। ইসলামের বিধান ব্যাখ্যা করা এবং মুসলিম জাতিকে রক্ষা করার জন্য তিনি তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন এবং নবী, সত্যবাদী, শহীদ ও ধার্মিকদের সঙ্গী করুন।
আশির দশকে শাইখূল ইসলাম রাহ.’কাতার সফরে গেলে শাইখ ইউসুফ আল কারজাভি রাহ.’র সাথে একগুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছিল।
আল্লামা আনাস মাদানী বলেন, আমার আব্বাজান শাইখূল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী রাহ.’র সাথে সুসম্পর্ক ছিলেন।
শাইখূল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী রাহ.’র শাহাদাতে শাইখ ইউসুফ আল কারজাভি রাহ. শোকবাণী দিয়ে ছিলেন।
আশির দশকে শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.কাতার সফরে গেলে শাইখ আল্লামা ইউসুফ কারজাভীর সাথে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়।
তৎপরবর্তীকালে শাইখ কারজাভীর সাথে শাইখুল ইসলাম রাহ. বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে পরস্পরে বহুবার যোগাযোগ হয়েছে।
আল্লামা ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-কারজাভির ইন্তেকালে মুসলিম জাহানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। শাইখের মৃত্যুতে আল্লামা আনাস মাদানী গভীর শোক প্রকাশ করেন।
আল্লামা কারজাভীর সংক্ষিপ্ত জিবন ও কর্ম
শায়খ কারাজাভির জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করেন। এরপর প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মীয় অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইন্সটিটিউট অব ইমামস’-এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘বোর্ড অব রিলিজিয়ন এফেয়ার্স’-এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরিয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ’ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাইন্টিফিক কাউন্সিল’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে কাতার ফিরে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন।
শায়খ ইউসুফ কারাজাভি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন একাডেমিক সংস্থার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি জর্ডানের ‘রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ’, ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামি এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফাতওয়া অ্যান্ড রিচার্জ’-এর প্রধান হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
শায়খ ইউসুফ কারাজাভি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরষ্কার লাভ করেন। ইসলামী শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরষ্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও তার বৈচিত্র্যময় পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি নানা পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ১৭০ এর অধিক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গেও শায়খ আল-কারাজাভির জ্ঞানভিত্তিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। বাংলা ভাষায় তার বেশ কিছু বই অনূদিত হয়েছে এবং বিদগ্ধ মহলে সাড়া ফেলেছে।কারজাভি আল জাজিরাতে সম্প্রচারিত তার অনুষ্ঠান ‘শরিয়া ও জীবন’-এর জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। বিশ্বব্যাপী এ অনুষ্ঠানে শ্রোতা ৪০-৬০ মিলিয়ন।
ড. কারজাভি ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মিশরের উত্তর নীলনদী তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তিনি বাবাকে হারান। মাত্র ১০ বছর বয়সেই সম্পূর্ণ কোরআন হেফজ করেন এবং কোরআন তিলাওয়াতের নীতিমালা, তাজবিদের ওপর ব্যুৎপত্তি লাভ করেন।