নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বগুড়া বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে মাসতিনেক আগে সম্ভাবতা যাচাই করে গেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রতিনিধি দল। এর মাধ্যমেই প্রায় ২৬ বছর পর বগুড়ায় বিমান ওঠানামার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শুরু হয়েছে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ। সরকারের নির্দেশনা পেলেই খুলে যাবে দুয়ার। বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। তবে এতকিছুর পরও বগুড়া বিমানবন্দর চালুর গ্রিন সিগন্যাল লালফিতায় ‘বন্দি’ হয়ে আছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেবিচক প্রতিনিধি দলটি গত ১৪ নভেম্বর বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করে। পাঁচ সদস্যের ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থার সদর দপ্তরের প্রশাসন বিভাগের উপপরিচালক (সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) ইশরাত জাহান পান্না। তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমানের কাছে একটি রিপোর্ট দিয়েছি আমরা। এখন বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে তা অবশ্য জানি না। তবে অনুমতি মিললে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বগুড়া বিমানবন্দরটি চালুর ব্যাপারে সংসদে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন গাবতলী-শাজাহানপুরের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। তিনিই মূলত বিমানবন্দরের কাজের বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। জানতে চাইলে সাংসদ বাবলু বলেন, ‘বেবিচক প্রশাসন বিভাগের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, কাজের কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে তারা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি আমাকে। তাই শিগগিরই বেবিচক চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব। তখনই হয়তো জানা যাবে বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে।’
এদিকে শহরতলির এরুলিয়ার বিমানবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিন-রাত সেখানে কাজ করছেন শ্রমিকরা। চলছে রানওয়ে স¤প্রসারণের কাজ। তবে এটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য কিনা, সে ব্যাপারে দায়িত্বরত কেউ কিছু জানাতে পারেননি।
অবশ্য খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানবন্দরটিকে বাণিজ্যিক ব্যবহারের উপযোগী করতে আরও ১০০ একর জমির প্রয়োজন। এর মধ্যে বিমানবন্দরের কিছু জমি রয়েছে, যা বেদখল করে অনেকেই স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। নির্দেশনা পেলে সেই সব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দিয়ে বাকি জমি অধিগ্রহণ করা হবে। যদিও সেই প্রক্রিয়া কবে শুরু হতে পারে, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
ভৌগোলিক ও বাণিজ্যিক অবস্থান বিবেচনায় বগুড়া বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৮৭ সালে। এর পর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিংয়ের (স্টল) উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য ২২ কোটি টাকার নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। তারপর বগুড়া শহর থেকে প্রায় সাত কিলেমিটার পশ্চিমে বগুড়া-নওগাঁ সড়কের ধারে এরুলিয়া এলাকায় অধিগ্রহণ করা হয় ১১০ একর ভ‚মি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পের আওতায় ৬০০ ফুট প্রস্থের পাঁচ হাজার ফুট রানওয়ে, অফিস ভবন, টার্মিনাল ভবন, আবাসিক ভবন, বিমানবন্দরে পৌঁছার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো নির্মাণ হয়। কথা ছিল, ২০০০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে সিভিল অ্যাভিয়েশনের আওতায় উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ করবে বিমানবন্দরটিতে। যদিও ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বিমানবাহিনীর কাছে বিমানবন্দরটি ন্যস্ত করে। পরে বিমানবাহিনী সেখানে রাডার স্টেশন স্থাপন করে সামরিক বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে। প্রায় ২৬ বছর ধরে বগুড়া বিমানবন্দর এভাবেই চলছে।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে আবারও ক্ষমতায় এলে বগুড়া বিমানবন্দরকে সিভিল অ্যাভিয়েশনের আওতায় নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে অনাপত্তি জানায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীও। এর পর বর্তমান রানওয়ের উভয় দিকে দেড় হাজার করে তিন হাজার ফুট স¤প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কারণ পূর্বের রানওয়ে ছিল স্টল বিমান ওঠানামার। যদিও অধিক যাত্রী বহন ও উন্নতমানের উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের জন্য অন্তত আট হাজার ফুট রানওয়ে দরকার।
জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্র জানায়, বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়েকে আট হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে। এর সঙ্গে জ্বালানি রিজার্ভার, যাত্রী সুবিধা, মালামাল ব্যবস্থাপনাসহ অন্য সুবিধার জন্য অন্তত একশ একর ভ‚মি প্রয়োজন। তাই বিদ্যমান রানওয়ের পশ্চিমে জমি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে ভ‚মি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া থাকলেও এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো চিঠি আসেনি।
এদিকে বগুড়া-৭ আসনের সাংসদ রেজাউল করিম বাবলু বিমানবন্দরটি চালু করতে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর কাছে লিখিত প্রস্তাবনা পাঠান। তার পরই একটি কমিটি গঠন করে বেবিচক। তারা বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করে। অন্যদিকে বগুড়া-৫ আসনের সাংসদ হাবিবুর রহমান বগুড়া বিমানবন্দরকে শেখ রাসেলের নামে চালুর দাবি জানান।
বিমানবন্দরটির গুরুত্ব সম্পর্কে বগুড়ার শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাছুদুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-অর্থনীতি, কৃষিসহ সব দিক থেকেই এগিয়ে বগুড়া। নতুন শিল্পোদ্যোক্তারাও এখানে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা আরও বাড়ছে। এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাণিজ্যিক বিমানসেবা চালু জরুরি হয়ে পড়েছে।’ মাছুদুর রহমান বলেন, ‘সড়কপথে ঢাকা থেকে বগুড়া আসতে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায় এখন। পথের এই ভোগান্তির কারণে বগুড়ায় কোনো বিদেশি ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও রপ্তানিকারকরা আসতে চান না। আর তারা না এলে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন তেমন কাজে আসবে না। তা ছাড়া অনেক মানুষ এখন বগুড়া থেকে সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করতে চান না। তারাও এই এলাকায় বিমানবন্দর চান।’
বগুড়ায় হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও পুলিশের তথ্যানুযায়ী, বাংলার প্রাচীন রাজধানী মহাস্থানগড়সহ দর্শনীয় ও ধর্মীয় একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে বগুড়ায়। তাই প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ হাজার বিদেশি ও পর্যটক এ জেলায় আসেন। আবার চেম্বারের তথ্যানুযায়ী, এ জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ছোট বড় প্রায় ২০টি শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব শিল্প-কারখানার