নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার উদ্যোগে ৮ অক্টোবর (শনিবার) আধ্যাত্মিক রাজধানী পুণ্যভূমি সিলেট নগরীতে হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মুবারক র্যালি’। এ র্যালিতে অংশগ্রহণের জন্য সকাল থেকেই সোবহানীঘাটস্থ হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে সিলেট বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা জমায়েত হন। সকাল ১০টা থেকে যুহরের পূর্ব পর্যন্ত প্রিয়নবী (সা.) এর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী ও অতিথিবৃন্দ। বাদ যুহর শুরু হয় র্যালি। প্রিয়নবীর শানে রচিত কালজয়ী নানা কবিতার শ্লোক অঙ্কিত নানা রঙের ফেস্টুন ও প্লেকার্ড র্যালিতে শোভাবর্ধন করে। আশিকে রাসূল ছাত্রজনতার সুরে সুরে ধ্বনিত হয় প্রিয়নবীর প্রশংসাগীতি। ত্বালায়াল বাদরু আলাইনা, সালাম সালাম নবী সালাম সালাম, মাওলা ইয়া সাল্লি ওয়া সাল্লিম, বালাগাল উলা-বি কামালিহি, শামছুদ্দুহা আসসালাম, এরকম অগণিত নাত-এর সুমধুর সুর লহরি নগরীর আকাশ বাতাস মুখরিত করে। র্যালিপূর্ব আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন- মানবতা বিবর্জিত পৃথিবীতে মানবতা ও শান্তির পয়গাম নিয়ে তাশরিফ এনেছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন উত্তম আদর্শ। তাঁর এ উত্তম আদর্শ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। তাঁর শান্তির পয়গাম দুনিয়ার দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। রবিউল আউয়াল মাসে নবীর আদর্শ চর্চার যে ধারা চলমান তা পুরো বছরব্যাপী অব্যাহত রাখতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, প্রিয়নবী (সা.) যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন তখন মানবিকতা বলতে কিছু ছিলনা, ছিল শুধু হানাহানি। মজলুমের আর্তনাদে ছিল আকাশ ভারী। নারীদের কোনো মান-মর্যাদা ছিলনা। অপেক্ষাকৃত দুর্বলেরা সমাজে নির্যাতিত-নিষ্পেষিত ছিল। এমনি সময়ে সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মানুষকে প্রকৃত মানবিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে দুনিয়ার বুকে তাশরীফ এনেছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি ছিলেন বিশ্বমানবতার জন্য আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ করুণা ও অনুগ্রহ। তাঁর জীবনদর্শনে মানবজীবনের সর্বোত্তম ও পরিপূর্ণ আদর্শ নিহিত রয়েছে। সে আদর্শ অনুসরণে সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রিয়নবীর প্রতি যেমন সর্বোচ্চ ভালোবাসা লালন করতে হবে তেমনি তাঁর সুমহান আদর্শ অনুসরণ, চর্চা ও প্রচার-প্রসারে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বক্তারা বলেন, বর্তমান সময়ে কিছু কুচক্রীমহল জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ধ্বংসের অপচেষ্টা করছে। মুসলিম ছাত্র সমাজকে ইসলামী শিক্ষা থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ইসলাম কখনো অশান্তি সৃষ্টি ও সংঘাতকে সমর্থন করে না। যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতার কথা ইসলাম শিক্ষা দেয়। ইসলামের নবী দুনিয়াতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে নমুনা প্রদর্শন করেছেন এর নজীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই প্রিয়নবীর আদর্শ অনুসরণে সংঘাত নয় বরং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন সময়ে কিছু লোক বিভিন্ন ধর্ম ও মুসলমানদের অনুভুতির কেন্দ্রস্থল মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটাক্ষ করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে উস্কানীমূলক বক্তব্য পরিহার করতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে কোনো মানুষকে অযথা যেন হয়রানি করা না হয় সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশের শান্তি রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
র্যালি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক মো. জাহেদুর রহমান এর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব এস এম মনোয়ার হোসেন, সদস্য কবির আহমদ ও কাওছার হামিদ সাজুর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত র্যালিপূর্ব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ’র মুহতারাম সভাপতি হযরত মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান আহমদ।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা একেএম মনোওর আলী, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্জ শফিকুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, আনজুমানে আল ইসলাহর সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর নুমান, অর্থ সম্পাদক মাওলানা আবু ছালেহ মো. কুতবুল আলম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খান, গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজ এর অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, সিলেট ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ্জ শেখ মখন মিয়া, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আরমান আহমেদ শিপলু।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. আলমগীর হোসাইন, মাওলানা আজির উদ্দিন পাশা, হাফিয মাওলানা নজীর আহমদ হেলাল, মাওলানা বেলাল আহমদ, মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল করিম মহসিন, সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান, মুহা. শরীফ উদ্দিন, মাওলানা মুহিবুর রহমান, মাওলানা হুমায়ূনুর রহমান লেখন, সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ উসমান গণি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ফরহাদ, আনজুমানে আল ইসলাহ’র সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সালেহ আহমদ সহ প্রমুখ।