নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে উপ্তত্ত হয়ে উঠেছে সমুদ্র নগরী কক্সবাজারের রাজনীতি। ১৭ অক্টোবরের এ নির্বাচনে চার চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা খান বাহাদুর মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মোটর সাইকেল মার্কায়, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার তাল গাছ মার্কায়, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও বহিস্কৃত প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ:সভাপতি শাহীনুল হক মার্শাল আনারস মার্কায় ও জমিদার প্রয়াত কালী চরন বড়ুয়ার ছেলে জগদীশ বড়ুয়া পার্থ প্রজাপতি মার্কায় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছেন।
এদিকে, গত কয়েক দিনের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই ১১ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্বী প্রার্থীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় শাহীনুল হক মার্শালের বিরুদ্ধে অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখানো ও অর্থ দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করে আওয়ামীলীগ প্রার্থী মোস্তাক আহমদ সমাধান চান নতুবা প্রার্থীতা প্রত্যাহারের করার কথা বলেন। এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থী জগদীশ বড়ুয়াও তার কথায় সমর্থন করে প্রয়োজনে তিনিও প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবে বলে উল্লেখ করেন। অন্য দিকে, শাহীনুল হক মার্শাল অভিযোগ করেন সরকার দলীয় প্রার্থী ভোট ডাকাতি করতে চায়।
এরপূর্বে বিভিন্ন সভায় আওয়ামীলীগের বিদ্রােহী প্রার্থী শাহীনুল হক মার্শাল, জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দূর্নিতীর সাথে জড়িত ছিলো বলে অভিযোগ করে আসছে। এছাড়াও মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরন বিধি ভঙ্গেরও অভিযোগ এনেছেন তিনি। তবে, তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে কক্সবাজারের পরিচ্ছন্ন রাজণীতিবিদ হিসেবে পরিচিত সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা খান বাহাদুর মোস্তাক আহমদ।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাগরিক সমাজের এক প্রতিনিধি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে কক্সবাজারে যে অস্বস্থি শুরু হয়েছে তা নিয়ে সাধারন মানুষ বেশ চিন্তিত। শাহীনুল হক মার্শালের জনক এ কে এম মোজাম্মেল হক সাহেব কক্সবাজারের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হলেও তার সন্তানদের কর্মকান্ডে তাকে প্রশ্ন বৃদ্ধ করা হচ্ছে বার বার। ঐ পরিবারের বড় ছেলে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, আরেকজন জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক, আরেকজন আওয়ামীলীগ মনোনিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বোন জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি। তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আরেক জনের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছেন না অনেকেই। পরিবারের সব সদস্যের পাশাপাশি নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জুয়েল সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচন করছেন। এক পরিবারে এতজন পদে থাকলে বাকী কারো তো রাজনীতি করার দরকার নেই। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্শাল যে ভাবে মোস্তাক সাহেবের সন্মান নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে এটি রাজনীতির জন্য অশুভ।
অন্যদিকে হোটেল মোটেল জোনের হোটেল কর্মকর্তা জুয়েল আহমদ জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী শাহীনুল হক মার্শাল প্রসঙ্গে বলেন, ওনাদের বিরুদ্ধে তো অভিযোগের শেষে নেই, মানুষ ভয়ে কিছু বলে না। নির্বাচনের সময় লাইসেন্স করা পিস্তল জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও উনি সরাসরি চিন্হিত সন্তাসীদের (সন্ত্রাসী মোন্নাফ শিকদার ওরফে গুজা মুনাফের নেতৃত্বে, যার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ সহ ৮ টি মামলা রয়েছে) সাথে অস্ত্র নিয়ে চলা ফেরা করেন, মানুষদের ভয় দেখান। হোটেল মোটেল জোনে হোটেল দখল করেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন শুধু হোটেল দখল করেই তিনি ক্ষান্ত দেন নি, সেই হোটেলে রাতে জলসা ঘর বসে, সেখানে বেআইনী কার্যক্রমও পরিচালিত হয়। গত কিছুদিন পূর্বে তার স্পা সেন্টার থেকে প্রায় বিশ জন মেয়েকে উদ্ধার করেছে টুরিষ্ট পুলিশ।
বাহারছড়ার জনৈক সরোয়ার আলম বলেন, কি আর বলব সুদের ব্যবসায় টাকা দিয়ে কত মানুষকে হয়রানি করেছে তারা। নদীর পাশে সরকারি জায়গা দখল করেছে, মানুষের জায়গা দখল করেছে। তার এক ভাই ম্যাট্রিক পাশ না করেই অনেক বড় পদে আছে। গত কিছুদিন পূর্বে জেলা শ্রমিক লীগের পদধারী এক নেতাকে প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে লাঞ্চিত করেছেন। এখন আবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে চায়, এরপর যে কি করবেন তা স্বয়ং সৃস্টিকর্তাই জানেন। তবে, সব কিছুর পরও নির্বাচন সুষ্ঠ হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
উল্লেখ্য কক্সবাজার জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে চার জন প্রার্থী, নয়টি সাধারন ওয়ার্ডের ৩৩ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত নারী আসনের ১১ জন প্রার্থী রয়েছে।